কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও রাজপথ মন্ত্রী নীতিন গড়করি (Gadkari) সম্প্রতি দেশে ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “দেশে গরিবের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং সমস্ত সম্পদ কিছু ধনী ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এটা এভাবে চলা উচিত নয়।” গডকড়ির এই মন্তব্য মোদী সরকারের উন্নয়নের উচ্চাভিলাষী দাবিগুলির বিরুদ্ধে একটি তীব্র সমালোচনা হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল।
তাঁর (Gadkari) এই বক্তব্য দেশে ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্যের একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে এবং গরিবরা আরও দরিদ্র হচ্ছে। গডকড়ির মন্তব্য দেশের আর্থিক বৈষম্যের কঠোর বাস্তবতাকে সামনে এনেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ৪০ শতাংশেরও বেশি সম্পদ মাত্র ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত।
অন্যদিকে, দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার কাছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। এই তথ্য দেশের ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের আর্থিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরে, যারা অর্থনৈতিক তীব্রতার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য। এই বৈষম্যের জন্য সমালোচকরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীতিগুলিকে দায়ী করছেন, যিনি ধনী শ্রেণির জন্য কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নীতিন গড়করি, (Gadkari) যিনি তাঁর স্পষ্টবাদিতা এবং উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পরিচিত, তাঁর এই বক্তব্য মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলির উপর প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, অর্থনীতির এমনভাবে বৃদ্ধি পাওয়া উচিত যাতে বেশি থেকে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তাঁর মতে, সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি, যাতে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষও উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত হতে পারে।
বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস, গড়করি (Gadkari) এই মন্তব্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ বলেন, “মোদী সরকারের পুঁজিপতিপ্রীতি নীতির কারণে ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে। ৮০ কোটি মানুষ সরকারি রেশনের উপর নির্ভরশীল, আর ধনীদের সংখ্যা বেড়ে ৩.৭৮ লক্ষে পৌঁছেছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, মোদী সরকার গরিবের অধিকার কেড়ে ধনীদের পকেট ভরছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বেগজনক স্তরে পৌঁছেছে। দেশের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশেরও বেশি মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে, যখন ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার কাছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ রয়েছে।
এই বৈষম্যের ফলে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ আর্থিক দুর্দশায় জীবনযাপন করছে। এই পরিস্থিতি গরিবদের আরও দরিদ্র করে তুলছে, যখন ধনীরা তাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে। বিরোধী দলগুলি দাবি করছে যে, মোদী সরকারের নীতিগুলি ধনী শ্রেণির পক্ষে সুযোগ তৈরী করছে।
তারা (Gadkari) অভিযোগ করছে যে, সরকারের কর্পোরেটপন্থী নীতি, যেমন ট্যাক্স ছাড় এবং বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে ধনী শিল্পপতিদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতা উদয়ভানু সিং বলেন, “গডকড়ি নিজেই স্বীকার করছেন যে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে এবং সম্পদ ধনীদের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
তবুও এই ঘটনায় সরকারের ভূমিকা কি?(Gadkari) গরিবের অধিকার কেড়ে বড় পুঁজিপতিদের পকেট ভরার খেলা কতদিন চলবে?”বিরোধীরা আরও দাবি করে যে, মোদী সরকারের নীতি, যেমন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’, শুধুমাত্র বড় শিল্পপতিদের জন্য উপকারী হয়েছে। সরকারের ফোকাস শহুরে পরিকাঠামো এবং বড় প্রকল্পের দিকে বেশি থাকায় গ্রামীণ অর্থনীতি এবং কৃষকদের প্রতি উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব বেড়েছে।
গড়করি (Gadkari) আগেও জাতিগত জনগণনার বিরোধিতা করে বলেছিলেন যে, সমাজের শেষ স্তরে থাকা মানুষের উন্নয়নের জন্য মানবতার ভিত্তিতে কাজ করা উচিত, জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে নয়। তাঁর এই মন্তব্য তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়, যা বিজেপির মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক। তবে তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলির ব্যর্থতাকে সামনে এনেছে।
সরকারের (Gadkari) প্রতিক্রিয়ামোদী সরকার এই অভিযোগের জবাবে দাবি করেছে যে, তাদের নীতি সমগ্র দেশের উন্নয়নের জন্য। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, তাঁর সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি দাবি করেন যে, তাঁর সরকার গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে কাজ করছে, যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি, যার মাধ্যমে ১২ কোটিরও বেশি কৃষককে বছরে ৬,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে ৫০ কোটিরও বেশি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
গড়করির (Gadkari) মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকে তাঁর এই স্পষ্টবাদিতাকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে সরকারের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। এক্স-এ পোস্ট করা মন্তব্যগুলিতে দেখা গেছে, অনেকে এই বৈষম্যের জন্য সরকারের নীতিকে দায়ী করছেন।
দলাই লামার জন্মদিনে চাঁদের হাট, দিলেন বিশ্ব শান্তির বার্তা
নীতিন গড়করির (Gadkari) মন্তব্য ভারতের ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্যের একটি সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরেছে। তাঁর বক্তব্য সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলির উপর প্রশ্ন তুলেছে এবং গরিবদের প্রতি আরও ন্যায়বিচারের দাবি জোরালো করেছে। এই পরিস্থিতি ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। সরকারের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে এই বৈষম্য কমাতে এবং সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।