দলাই লামার জন্মদিনে চাঁদের হাট, দিলেন বিশ্ব শান্তির বার্তা

তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামার (Dalai Lama) ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে ভারতের ধর্মশালায় একটি উৎসবমুখর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত…

Dalai Lama for world peace in birthday

তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের আধ্যাত্মিক নেতা দলাই লামার (Dalai Lama) ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে ভারতের ধর্মশালায় একটি উৎসবমুখর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত হয়ে শান্তি, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং করুণার প্রতি তাঁদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

দলাই লামার (Dalai Lama) দীর্ঘজীবন কামনা করে এই সমাবেশে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু, বিজেপি নেতা বিজয় জলি এবং জেডি(ইউ) নেতা রাজীব রঞ্জন সিং (লালন সিং) উপস্থিত আছেন। এই অনুষ্ঠানে দলাই লামার শান্তি ও অহিংসার বার্তার প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।

   

ধর্মশালার সুকলাখাং তিব্বতীয় বৌদ্ধ কমপ্লেক্সে (Dalai Lama) এই জন্মদিন উদযাপনের জন্য হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। ভারী মৌসুমি বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশা সত্ত্বেও, ভক্তরা সকাল থেকে রাস্তায় জড়ো হন এবং দলাই লামাকে এক ঝলক দেখার আশায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ঐতিহ্যবাহী তিব্বতীয় পোশাকে মুখোশধারী নৃত্যশিল্পীরা ঘণ্টা, বাঁশি এবং শিঙার শব্দে নৃত্য পরিবেশন করেন।

দুজন সহকারীর সহায়তায় দলাই লামা মন্দিরে প্রবেশ করেন, যেখানে তাঁকে উৎসাহী ভক্তরা স্বাগত জানান। এই অনুষ্ঠানে হলিউড অভিনেতা রিচার্ড গিয়ারও উপস্থিত ছিলেন, যিনি দলাই লামার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর হাতে চুম্বন করেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এই অনুষ্ঠানে বলেন, “দলাই লামার (Dalai Lama) প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ধর্মীয় এবং ভারত সরকার ধর্মীয় বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করে না।” তিনি চীনের আপত্তি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেন, “আমরা সবকিছু তাঁর হাতে ছেড়ে দিই।” অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তিনি অরুণাচলের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি দলাই লামার দীর্ঘজীবন এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।

বিজেপি নেতা বিজয় জলি বলেন,(Dalai Lama) “ভারতের সঙ্গে দলাই লামার বন্ধুত্ব, সহিষ্ণুতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি এবং তাঁর দীর্ঘজীবন কামনা করি।” তিনি চীনের সমালোচনা করে বলেন, দলাই লামা বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। জেডি(ইউ) নেতা রাজীব রঞ্জন সিং দলাই লামার অহিংসার প্রতি উৎসর্গকে প্রশংসা করে বলেন, “সরকার ধর্ম ও বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করে না।”

দলাই লামা (Dalai Lama) তাঁর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে একটি বিশেষ বার্তা জারি করেন, যেখানে তিনি তাঁর জন্মদিন উদযাপনকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি সাধারণত জন্মদিন উদযাপন করি না, তবে আমি আনন্দিত যে আপনারা এই উপলক্ষে করুণা, উষ্ণহৃদয়তা এবং পরোপকারিতার উপর জোর দিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন, (Dalai Lama) “যদিও বৈষয়িক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ, তবে ভালো হৃদয় গড়ে তোলার মাধ্যমে মানসিক শান্তি অর্জন এবং সকলের প্রতি করুণা প্রদর্শন করা অত্যন্ত জরুরি।” তিনি মানবিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং তিব্বতীয় সংস্কৃতির প্রচারে তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

Advertisements

চীনের অবস্থান ও বিতর্কএই উদযাপনের মধ্যে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, দলাই লামার পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ায় বেইজিংয়ের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। চীনের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্ম চীনা বৈশিষ্ট্যের ধর্ম এবং পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি অনুসরণ করবে।

এই অবস্থান তিব্বতীয় সম্প্রদায় (Dalai Lama) এবং মানবাধিকার কর্মীদের কাছে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে, যারা এটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। দলাই লামা স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর উত্তরাধিকার নির্বাচনের একমাত্র কর্তৃত্ব গাডেন ফোড্রাং ট্রাস্টের হাতে থাকবে।

দলাই লামার (Dalai Lama) জন্মদিনে বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ বলেন, “১৪০ কোটি ভারতীয়ের সঙ্গে আমি দলাই লামার ৯০তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই। তিনি প্রেম, করুণা, ধৈর্য এবং নৈতিক শৃঙ্খলার প্রতীক।” প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা দলাই লামাকে “তরুণতম ৯০ বছর বয়সী” বলে অভিহিত করে তাঁর বন্ধুত্বের জন্য ধন্যবাদ জানান। বিল ক্লিনটন তাঁকে শান্তি ও সমঝোতার কণ্ঠস্বর হিসেবে বর্ণনা করেন।

দলাই লামার (Dalai Lama) উত্তরাধিকার ও তিব্বতীয় সংগ্রাম১৯৫৯ সালে তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দলাই লামা তিব্বতীয় সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্ম রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ‘মধ্যম পথ’ নীতির মাধ্যমে তিব্বতের জন্য স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন, যা তাঁকে ১৯৮৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার এনে দিয়েছে। তিনি তিব্বতীয় সরকার-ইন-এক্সাইল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ধর্মশালায় তিব্বতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

ভারতীয় নোটে মহাত্মা গান্ধীর ছবি কেন থাকে? আসল কারণ প্রকাশ করল আরবিআই

দলাই লামার (Dalai Lama) ৯০তম জন্মদিন উদযাপন ধর্মশালায় শুধু একটি আধ্যাত্মিক ঘটনা নয়, বরং তিব্বতীয় সংগ্রাম এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি এবং তাঁদের শান্তি ও করুণার প্রতি প্রতিশ্রুতি ভারতের তিব্বতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। দলাই লামার বার্তা এবং তাঁর উত্তরাধিকার বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য একটি আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে চলেছে।