নাগরিকদের জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিল করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি শুধু আয় প্রদর্শন করার জন্য নয়, বরং করের হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে কতটুকু কর দেওয়া হয়েছে এবং কতটুকু ফেরত পাওয়া যেতে পারে, তা জানার জন্যও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আয়কর আইন ১৯৬১ অনুযায়ী, করদাতাদের নির্দিষ্ট অর্থবছরের জন্য আয়কর (Income Tax) রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সাধারণত, অ্যাসেসমেন্ট বছরের ৩১ জুলাই এর মধ্যে রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ থাকে। তবে চলতি বছরে অর্থাৎ অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার ২০২৫-২৬ এর জন্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
অনেক সময় দেখা যায়, রিটার্ন দাখিলের পর করদাতা রিফান্ড পেতে পারেন। এটি ঘটে তখনই যখন করদাতা মোট যে পরিমাণ কর প্রদান করেছেন, তা প্রকৃত প্রাপ্যের চেয়ে বেশি হয়। যেমন, টিডিএস (Tax Deducted at Source), অগ্রিম কর ইত্যাদি মাধ্যমে সরকারের কাছে অতিরিক্ত কর জমা হয়ে গেলে রিটার্ন দাখিলের সময় বিভিন্ন ডিডাকশন, এক্সেম্পশন এবং সেট-অফ ক্লেইম করার মাধ্যমে ট্যাক্স লায়াবিলিটি কমে যায়। তখন অতিরিক্ত পরিশোধিত অর্থ ফেরত পাওয়া যায়।
কত দিনে রিফান্ড পাওয়া যায়?
সাধারণভাবে আয়কর বিভাগ রিটার্ন ই-ভেরিফাই করার পরেই রিফান্ড প্রসেস শুরু করে। সাধারণত ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে রিফান্ডের অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। তবে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মতে, অটোমেশন এবং প্রসেস ইমপ্রুভমেন্টের মাধ্যমে রিফান্ড প্রদানের গড় সময় এখন মাত্র ১০ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তবে বাস্তবে এই সময়টি একেক জনের জন্য একেক রকম হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যেই রিফান্ড দেওয়া হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে তা কয়েক সপ্তাহ বা মাসও লাগতে পারে। এমনকি বিরল পরিস্থিতিতে ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
রিফান্ড বিলম্বের কারণ:
১. ই-ভেরিফিকেশন না করা:
অনেক করদাতা রিটার্ন দাখিলের পর ই-ভেরিফিকেশন করতে ভুলে যান। ই-ভেরিফিকেশন না করলে রিটার্ন প্রসেস শুরু হয় না, ফলে রিফান্ডও পাওয়া যায় না।
২. প্যান-আধার লিঙ্ক না থাকা:
প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না থাকলে রিটার্ন প্রসেসে জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং রিফান্ড আটকে যেতে পারে।
৩. TDS এর ডিটেইলে মিসম্যাচ:
ফর্ম ২৬এএস (Tax Credit Statement) এবং রিটার্নের তথ্যের মধ্যে পার্থক্য থাকলে কর দপ্তর পুনরায় যাচাইয়ের জন্য ফাইলটি হোল্ড করতে পারে।
৪. ভুল ব্যাংক ডিটেইলস:
রিফান্ড সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ভুল একাউন্ট নাম্বার বা IFSC কোড থাকলে রিফান্ড ফেইল হতে পারে।
৫. ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের নোটিসের জবাব না দেওয়া:
কোনো কারণবশত যদি ডিপার্টমেন্ট কোনো প্রশ্ন বা নোটিস পাঠায় এবং সময়মতো উত্তর না দেওয়া হয়, তাহলে রিফান্ড আটকে যেতে পারে বা বিলম্বিত হতে পারে।
কীভাবে রিফান্ড স্ট্যাটাস চেক করবেন?
যদি রিটার্ন দাখিলের পর দীর্ঘ সময় ধরে রিফান্ড না পান, তবে প্রথমে আপনার ই-মেইল এবং ইনকাম ট্যাক্স পোর্টালের ‘My Account’ সেকশন চেক করুন। সেখানে রিফান্ডের স্ট্যাটাস দেখা যাবে। প্রয়োজনে ফর্ম ২৬এএস মিলিয়ে দেখুন কোনো ভুল বা মিসম্যাচ আছে কি না।
চলতি বছরের সময়সীমা বাড়ানো:
করদাতাদের জন্য স্বস্তির খবর হচ্ছে, অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার ২০২৫-২৬ এর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩১ জুলাই থেকে বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। এর ফলে যারা এখনো রিটার্ন দাখিল করেননি, তাদের কাছে অতিরিক্ত সময় থাকছে।
করদাতাদের অনুরোধ, শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন দাখিল করুন এবং ই-ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন। এতে রিফান্ড দ্রুত পাওয়া যাবে এবং কোনো জরিমানা বা বিলম্ব ফি এড়ানো সম্ভব হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা কেবল আইনি দায়িত্ব নয়, বরং এটি আপনার আর্থিক সচ্ছতা এবং ট্রান্সপারেন্সি প্রদর্শন করে। যাদের আয় নির্দিষ্ট সীমার বেশি, তাদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। তাছাড়া, রিটার্ন দাখিল না করলে পরবর্তী সময়ে লোন বা ভিসা প্রসেসিংয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
রিফান্ড পাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে এর জন্য সঠিক তথ্য প্রদান ও সময়মতো সমস্ত ধাপ সম্পূর্ণ করা অত্যন্ত জরুরি। ই-ফাইলিং সিস্টেমের মাধ্যমে এখন রিটার্ন দাখিল করা আরও সহজ এবং দ্রুত হয়েছে। সঠিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, প্যান-আধার লিঙ্কিং এবং TDS এর সঠিক বিবরণ প্রদানের মাধ্যমে করদাতারা সহজেই রিফান্ড পেতে পারেন।
তাই আর দেরি না করে, আজই আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন এবং রিফান্ড পাওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যান।