আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চিত রিটার্নের জন্য ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposits) এবং পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয়। বিশেষ করে যারা ঝুঁকিতে যেতে চান না এবং স্থিতিশীল আয়ের সন্ধান করেন, তাদের জন্য এই দুটি বিকল্প অত্যন্ত উপযোগী। যদিও দুটোই নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভের নিশ্চয়তা দেয়, তবুও কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জানা অত্যন্ত জরুরি।
ট্যাক্স সুবিধা:
FD এবং PPF-এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলির একটি হলো ট্যাক্স বেনিফিট। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করলে আয়কর আইনের ৮০সি ধারা অনুযায়ী বছরে সর্বাধিক ₹১.৫ লক্ষ পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় পাওয়া যায়। অন্যদিকে, সব ধরনের ফিক্সড ডিপোজিটে এই সুবিধা থাকে না। কেবলমাত্র ৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ডযুক্ত কিছু বিশেষ ট্যাক্স-সেভিং FD-তে এই সুবিধা পাওয়া যায়।
PPF-কে বলা হয় ‘EEE’ (Exempt-Exempt-Exempt) ক্যাটাগরির স্কিম। অর্থাৎ, বিনিয়োগের অর্থ, সুদের আয় এবং ম্যাচুরিটি রাশির উপর কোনও ট্যাক্স দিতে হয় না। অপরদিকে, FD-এর ম্যাচুরিটি রাশি করের আওতায় পড়ে এবং প্রয়োজনে ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্সও দিতে হতে পারে।
সুদের হার:
PPF-এর সুদের হার প্রতি ত্রৈমাসিকে ভারত সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়। বর্তমানে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, FY26) PPF-এর সুদের হার বছরে ৭.১ শতাংশ। এই সুদ বার্ষিকভাবে কম্পাউন্ড হয় এবং প্রতি বছর মার্চের ৩১ তারিখে অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
অন্যদিকে, ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার ব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এটি সময়কাল ও বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংক ৫% থেকে ৮% পর্যন্ত সুদের হার অফার করছে। তবে, ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার স্থির না থেকে সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল হয়।
লক-ইন পিরিয়ড:
ফিক্সড ডিপোজিটের লক-ইন পিরিয়ড খুবই ফ্লেক্সিবল। ৭ দিন থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত FD-এর মেয়াদ নির্ধারণ করা যায়। এই ফ্লেক্সিবিলিটি অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে এক বড় সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে, মেয়াদপূর্বে অর্থ তুলে নিতে চাইলে পেনাল্টি দিতে হতে পারে এবং প্রাপ্ত রাশির পরিমাণও কমে যেতে পারে।
অন্যদিকে, PPF-এর নির্দিষ্ট মেয়াদ হলো ১৫ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চাইলে ৫ বছরের ব্লকে এক্সটেনশন করা যায়। যদিও আংশিক অর্থ তোলার সুযোগ আছে, তা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্তে এবং নির্দিষ্ট সময় পরে অনুমোদিত হয়।
বিনিয়োগের ধরণ:
FD-তে বিনিয়োগের সময় এককালীন অর্থ জমা করতে হয়। বারবার অর্থ যোগ করার সুযোগ নেই। বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ন্যূনতম ১,০০০ টাকা থেকে FD শুরু করা যায়।
অন্যদিকে, PPF-এ বার্ষিক ন্যূনতম ৫০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। এখানে বিনিয়োগকারী চাইলে ধাপে ধাপে ছোট ছোট অঙ্কে বিনিয়োগ করতে পারেন, যা দীর্ঘমেয়াদি সেভিংসের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা।
কোনটি বেছে নেবেন?
আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য ও সময়সীমার উপর নির্ভর করে FD বা PPF বেছে নেওয়া উচিত। আপনি যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট সুদের হারে বিনিয়োগ করে নিশ্চিত রিটার্ন পেতে চান, তাহলে FD আপনার জন্য উপযুক্ত। এটি তুলনামূলকভাবে বেশি লিকুইড এবং মেয়াদপূর্তির আগে অর্থ প্রয়োজন হলে তুলনামূলক সহজে তোলা যায় (যদিও কিছু পেনাল্টি দিতে হয়)।
অন্যদিকে, যদি আপনার লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি সেভিংস এবং ট্যাক্স বেনিফিট, তাহলে PPF আদর্শ বিকল্প। এছাড়া, PPF-এর ট্যাক্স ফ্রি সুদের আয় এবং ম্যাচুরিটি রাশি ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত ফান্ড গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যারা ছোট ছোট অঙ্কে নিয়মিত সেভিংস করতে চান, তাদের জন্যও এটি উপযোগী।
FD এবং PPF উভয়ই নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম। তবে বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে আপনার আর্থিক প্রয়োজন, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য বিশ্লেষণ করে নিন। এক কথায়, ছোট মেয়াদে লিকুইডিটি ও ফ্লেক্সিবিলিটির জন্য FD, আর দীর্ঘমেয়াদে ট্যাক্স সেভিংস ও নির্ভরযোগ্য রিটার্নের জন্য PPF— এই সহজ সূত্র মেনে চললে আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত সহজ হবে।