বঙ্গ বিজেপির (BJP) রাজ্য রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলল নতুন সভাপতির পদক্ষেপে। ব্যক্তিগত প্রচারের পথে হাঁটলেন না তিনি, বরং দলীয় প্রতীককেই সামনে রেখে কার্যকলাপ শুরু করলেন বিজেপির (BJP) নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। শনিবার, কলকাতার মুরলি ধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বরাবরের মতো কোনও ব্যানারে সভাপতির বড় ছবি দেখা যায়নি। বরং গোটা ব্যাকড্রপে ছিল শুধুমাত্র পদ্মফুলের প্রতীক—যা বিজেপির সাংগঠনিক ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু।
দলীয় সূত্রের খবর, শমীক ভট্টাচার্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দল বড়, ব্যক্তি নয়।’’ তাঁর কথায়, “আমার মুখ নয়, দলের প্রতীকই মুখ হোক।” তাই সাংবাদিক সম্মেলন হোক বা কোনও দলীয় পোস্টার—সেখানে শমীকের ছবি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও সংগঠনের অগ্রাধিকারের বার্তা দিয়েছেন নতুন সভাপতি।
শুধু ছবি নয়, কেন্দ্রের দেওয়া নিরাপত্তারক্ষী গ্রহণ করতেও রাজি হননি শমীক। এমনকী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বল (CISF বা CRPF) থেকে প্রস্তাব এলেও তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানা গেছে। সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে একাত্ম হতে এবং “ভিআইপি কালচারের” থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েই এমন সিদ্ধান্ত।
এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, এটি শুধুই প্রতীকী নয়, বরং তৃণমূল স্তরের কর্মীদের মন জয় করার একটি কৌশলও বটে। বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “এই ধরনের বার্তা দলের ভিত মজবুত করতে সাহায্য করে। সাধারণ কর্মীরা মনে করেন, তাঁদের নেতা তাঁদের মধ্যেই একজন।”
রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির অতীত নেতৃত্বের সময় বহুবার ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচার সামনে এসেছে। একাধিক নেতা ও সভাপতির ব্যানারে নিজস্ব ছবি এবং নাম থাকতই। সেই প্রবণতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পথে হেঁটে শমীক যেন বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই নতুন ভাবনার ধারক।
শমীক ভট্টাচার্য যেহেতু বহুদিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে যুক্ত এবং রাজ্যসভায় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেছেন, তাই এই ধরনের সংযত আচরণ তাঁর অভিজ্ঞতা ও দলীয় দর্শনের প্রকাশ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি রাজ্যে নতুন করে সাংগঠনিক চর্চা শুরু করবে বলে আশা করছেন অনেকে।
বঙ্গ বিজেপিতে নতুন সভাপতি নির্বাচনের পর থেকেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠছিল—তিনি কীভাবে নিজেকে ও দলকে প্রতিষ্ঠা করবেন? শনিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর ‘প্রথম পা’ দেখিয়ে দিল, শমীক ভট্টাচার্য ব্যক্তি নয়, প্রতীক ও আদর্শকেই প্রাধান্য দিতে চান। আর সেই পথ ধরেই আগামী দিনে বিজেপি নতুনভাবে নিজেদের সংগঠন শক্ত করতে পারে বলেই মত দলের অনেকের।
শমীক ভট্টাচার্যের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বাংলার রাজনীতিতে নতুন বার্তা। নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে ব্যক্তির জায়গায় প্রতীকের গুরুত্ব, আর দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাই এখন তাঁর মুখ্য মন্ত্র। এই মনোভাব ভবিষ্যতের জন্য বিজেপির ভিত কতটা মজবুত করতে পারে, তা বলবে সময়।