প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান প্রদান

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Prime Minister Narendra Modi) ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য রিপাবলিক অফ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’ (Trinidad and…

Prime Minister Narendra Modi Receives Trinidad and Tobago’s Highest Civilian Honour, Dedicates Award to 140 Crore Indians

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Prime Minister Narendra Modi) ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘দ্য অর্ডার অফ দ্য রিপাবলিক অফ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’ (Trinidad and Tobago) প্রদান করা হয়েছে। এই সম্মান তাঁর বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব, ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক এবং কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন তাঁর মানবিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়েছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিন কার্লা কাঙ্গালু এই পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রদান করেন। এটি প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশি নেতাকে এই সম্মানে ভূষিত করা হলো।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর পাঁচ দেশের সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে দুই দিনের জন্য ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফরে রয়েছেন। এই সফর তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফর এবং ১৯৯৯ সালের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্তরে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এই সম্মান গ্রহণ করে মোদী বলেন, “আমি ১৪০ কোটি ভারতীয়দের পক্ষে এই সম্মান গ্রহণ করছি। এই পুরস্কার আমাদের দুই দেশের মধ্যে চিরন্তন এবং গভীর বন্ধুত্বের প্রতীক।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারত এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন ১৮০ বছর আগে ভারতীয়দের এই দেশে আগমনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।

   

বৃহস্পতিবার ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা পারসাদ-বিসেসার এই পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি মোদীর সফরকে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একজন নেতার উপস্থিতিতে সম্মানিত যিনি আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এটি কেবল একটি প্রোটোকল নয়, বরং গভীর বন্ধুত্বের একটি অঙ্গীকার।” তিনি মোদীর বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব, ভারতীয় প্রবাসীদের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ভারতের ভ্যাকসিন মৈত্রী উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সহায়তার জন্য প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভারতের এই উদ্যোগ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মতো ছোট দেশগুলোর কাছে আশা ও শান্তি বয়ে এনেছিল।

এই পুরস্কার মোদীর ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মান। এর আগে তিনি ঘানায় ‘দ্য অফিসার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ঘানা’ সম্মানে ভূষিত হন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পুরস্কার মোদীর “বিশিষ্ট রাষ্ট্রনায়কত্ব এবং প্রভাবশালী বিশ্ব নেতৃত্বের” স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়েছে। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর এই সম্মান মোদীর বিশ্বব্যাপী প্রভাব এবং ভারতের ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতির স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জনসংখ্যা মাত্র ১৩ লক্ষ, যার মধ্যে ৪৫ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রধানত বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের ভোজপুরী-ভাষী অঞ্চল থেকে আগত। তাঁদের পূর্বপুরুষরা উপনিবেশিক যুগে শ্রমিক হিসেবে এই দেশে এসেছিলেন। মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “তাঁরা তাঁদের মাটি ছেড়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের আত্মা ছাড়েননি। তাঁরা কেবল অভিবাসী ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন একটি চিরন্তন সভ্যতার দূত।” তিনি বিহারের ঐতিহ্যকে ভারত এবং বিশ্বের গর্ব হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন যে ২১শ শতাব্দীতে বিহার থেকে নতুন সম্ভাবনা উদ্ভূত হবে।

Advertisements

মোদী ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পার্লামেন্টে একটি যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি দুই দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি কাঙ্গালুর পূর্বপুরুষ তামিলনাড়ুর সন্ত তিরুভাল্লুভারের ভূমি থেকে এসেছেন। হাজার বছর আগে তিরুভাল্লুভার বলেছিলেন, শক্তিশালী জাতি গড়ে ওঠে শক্তিশালী সেনাবাহিনী, দেশপ্রেমী নাগরিক, প্রচুর সম্পদ, কার্যকর নেতৃত্ব, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মাধ্যমে।” তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে ক্যারিকমের অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে মোদীর সফরে ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের উৎসাহ উল্লেখযোগ্য ছিল। পিয়ারকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে ঐতিহ্যবাহী ভোজপুরী চৌতাল এবং ভারতীয় সংস্কৃতির প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা পারসাদ-বিসেসার ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাকে তাঁকে স্বাগত জানান। মোদী ভারতীয় প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করেন এবং ষষ্ঠ প্রজন্মের ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকদের জন্য ওসিআই কার্ডের যোগ্যতা ঘোষণা করেন।

এই সম্মান ভারত এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মোদী তাঁর সফরে বাণিজ্য, শক্তি, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর এই সফর এবং সম্মান ভারতের বিশ্ব মঞ্চে ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতীক।