নির্বাচন কমিশন কে ‘বিজেপির পুতুল’ বলে, বিস্ফোরক তেজস্বী

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক চলছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব (Tejashwi) নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপের তীব্র…

Tejashwi slams election commission

বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক চলছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব (Tejashwi) নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। তাঁদের কাজ শুধু শোনা এবং দিল্লির কাছে তা পাঠানো।

কিন্তু আমরা (Tejashwi) সবাই জানি, দিল্লির পক্ষে কে সিদ্ধান্ত নেয়।” ২ জুলাই, ২০২৫-এ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এই মন্তব্য করেন। তেজস্বী আরও বলেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা হবে, তারপর রেশন কার্ড ও পেনশন প্রকল্প থেকেও তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হবে।

   

আমরা (Tejashwi) এই সংশোধন প্রক্রিয়ার সময় ও সম্ভাব্যতা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়েছি। ৮ কোটি মানুষের জন্য ২৫ দিনের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করা সম্ভব নয়। যাঁরা রাজ্যের বাইরে থাকেন, তাঁরা ফিরলেও সরকারি সহায়তা পাবেন না। ২৫ দিনের মধ্যে ৪-৫ কোটি মানুষকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা কি তাঁদের আছে?”

নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন, ২০২৫-এ বিহারে এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়ার নির্দেশ জারি করে। এই প্রক্রিয়ায় ২০০৩ সালের পরে ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া প্রায় ৩ কোটি ভোটারকে নিজেদের এবং তাঁদের পিতামাতার জন্ম ও বাসস্থানের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এই প্রক্রিয়া ২৫ জুন থেকে শুরু হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে শেষ হবে।

তবে, তেজস্বী যাদব (Tejashwi) এই প্রক্রিয়াকে ‘ভোটবন্দি’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটি গরিব, প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র। তিনি অভিযোগ করেন, এই প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নির্দেশে বিজেপির স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে।

তেজস্বী (Tejashwi)আরও বলেন, “২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই ভোট হয়েছিল। যদি এই তালিকা ভুল ছিল, তবে সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এখন হঠাৎ এই তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য কী?” তিনি জানান, বিহারের প্রায় ৭৩% এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, এবং এই সময়ে মানুষের কাছে জন্মসনদ বা অন্যান্য নথি থাকা বিরল। তিনি বলেন, “এই নথিগুলি গরিব মানুষের কাছে থাকে না। আধার কার্ড বা এমএনরেগা কার্ড কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না?”

ইন্ডিয়া ব্লকের ১১টি দলের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঁরা বলেন, এই প্রক্রিয়া ২ কোটিরও বেশি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে, বিশেষ করে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও সংখ্যালঘুদের।

Advertisements

কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, “২৫ দিনে ৮ কোটি ভোটারের তালিকা তৈরি করা অসম্ভব। এই প্রক্রিয়া নির্বাচনের আগে কেন করা হচ্ছে, যখন ২০০৩ সালের সংশোধনের পর দুই বছর সময় নেওয়া হয়েছিল?” তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের মূল কাঠামোর উপর আঘাত।

তেজস্বী (Tejashwi)অভিযোগ করেন, এই সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার পর রেশন কার্ড, পেনশন, বৃত্তি ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, “এটি শুধু ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র নয়, এটি গরিব মানুষের জীবনযাত্রার উপর আঘাত।” তিনি নির্বাচন কমিশনকে ‘বিজেপির পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এই প্রক্রিয়া বিজেপি ও নীতীশ কুমারের নির্বাচনী পরাজয়ের ভয় থেকে উদ্ভূত।

বিরোধী দলগুলি এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এবং রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদের পরিকল্পনা করছে। তাঁরা দাবি করেছেন, আধার কার্ড বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মতো বিকল্প প্রমাণ গ্রহণ করা হোক। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০০৩ সালের তালিকায় থাকা ৪.৯৬ কোটি ভোটারকে নথি জমা দিতে হবে না, তবে বাকি ৩ কোটি ভোটারের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য।

খিদিরপুরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিপূরণ পেতে জমা পড়েছে আবেদন, খতিয়ে দেখার নির্দেশ মেয়রের

এই ঘটনা বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। আগামী নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।