বর্তমানে ভারতের অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং আগ্রহ দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ছোট বিনিয়োগকারীরা, যারা কম মূলধন নিয়ে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ (Short-Term Investment) এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ বলতে বোঝানো হয় এমন বিনিয়োগ যা কয়েক দিন, মাস অথবা এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয় এবং যেটিতে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকি থাকে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো কম ঝুঁকিতে সঠিক রিটার্ন অর্জন করা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের জরুরি খরচের জন্য অর্থ সুরক্ষিত রাখা। অনেক বিনিয়োগকারীই স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকে আয়ের একটি বিকল্প উৎস এবং দ্রুত সম্পদ বৃদ্ধির উপায় হিসেবে দেখেন।
চলুন জেনে নিই ভারতের ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সেরা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের বিকল্প—
সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট:
সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজ বিনিয়োগের পদ্ধতি হলো সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা। এটি ঝুঁকিমুক্ত এবং সহজলভ্য। ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৩% থেকে ৬% পর্যন্ত সুদের হার প্রদান করে থাকে। যদিও এর রিটার্ন সীমিত, তবে এটি সম্পূর্ণ লিকুইড বিনিয়োগ। অর্থাৎ, প্রয়োজনে যেকোনো সময় আপনার টাকা তুলতে বা স্থানান্তর করতে পারেন। ATM এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধার মাধ্যমে সহজেই এই অর্থ ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। যারা অল্প ঝুঁকিতে অর্থ রাখতে চান এবং liquidity বজায় রাখতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ বিকল্প।
ফিক্সড ডিপোজিট:
ছোট বিনিয়োগকারীদের আরেকটি জনপ্রিয় পছন্দ হলো ফিক্সড ডিপোজিট বা FD। এতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ জমা রাখা হয় এবং ব্যাংক সেই সময়ে একটি স্থির সুদের হার প্রদান করে। স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য FD-এর মেয়াদ এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। সেভিংস অ্যাকাউন্টের তুলনায় FD-এর সুদের হার বেশি, প্রায় ৮% থেকে ৯% পর্যন্ত। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি ঝুঁকিমুক্ত এবং স্থিতিশীল রিটার্ন নিশ্চিত করে।
যদিও মেয়াদপূর্বে অর্থ তোলার সুবিধা সীমিত এবং প্রয়োজনে penalty দিতে হতে পারে, তবুও নিশ্চিত রিটার্নের কারণে বহু বিনিয়োগকারী FD বেছে নেন। ছোট বিনিয়োগকারীরা চাইলে অল্প কিছু অর্থ নিয়ে একাধিক FD তৈরি করতে পারেন, যা প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে ভাঙানো যেতে পারে।
মিউচুয়াল ফান্ড:
যারা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড একটি ভালো বিকল্প। এখানে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শেয়ার, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা হয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং সঠিক ফান্ড নির্বাচন করলে, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ৮% থেকে ১০% পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
তবে বাজারের ওঠানামার কারণে এখানে ঝুঁকি বেশি থাকে। সঠিক সময়ে ফান্ড বিক্রি বা রিডিম করলে ভালো লাভ পাওয়া যায়। অনেক সময় fund manager-এর দক্ষতা এবং বাজার বিশ্লেষণই মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। যারা কম সময়ে বেশি রিটার্নের আশা করেন এবং ঝুঁকি সামলাতে সক্ষম, তাদের জন্য এটি আকর্ষণীয়।
ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC):
ভারতের ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রাপ্ত ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা NSC হলো সরকার-সমর্থিত একটি সঞ্চয় প্রকল্প। এটি স্থির আয়ের বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। NSC সাধারণত ৫ বছরের মেয়াদে পাওয়া যায় এবং এর সুদের হার ৯% থেকে ১২% পর্যন্ত হতে পারে, যা ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।
এছাড়াও, এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে আয়কর আইন অনুযায়ী কর ছাড় পাওয়া যায়। তবে, মেয়াদপূর্বে টাকা তোলার সুবিধা নেই, অর্থাৎ একবার বিনিয়োগ করলে পুরো মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই অর্থ তোলা সম্ভব। তাই যারা স্থিতিশীল রিটার্ন চান এবং দীর্ঘমেয়াদে টাকা রাখার মানসিকতা রাখেন, তাদের জন্য এটি সেরা বিকল্পগুলোর একটি।
আজকের দিনে ছোট বিনিয়োগকারীরা অর্থ সঞ্চয়ের পাশাপাশি আয়ের বাড়তি উৎস তৈরি করতে চান। সেভিংস অ্যাকাউন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট, মিউচুয়াল ফান্ড এবং NSC—এই সব বিকল্পগুলোর মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করে সহজেই অর্থ সুরক্ষিত রাখা এবং বাড়ানো সম্ভব।
প্রতিটি বিকল্পেরই সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আছে। তাই বিনিয়োগের আগে নিজের আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকির মানসিকতা এবং liquidity প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সঠিক বিকল্প বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিক পরিকল্পনা এবং সতর্কতার মাধ্যমে ছোট বিনিয়োগকারীরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য মজবুত ভিত্তি তৈরি করতে পারেন।