ভারতীয় রেল এবার যাত্রী পরিষেবায় এক নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। দীর্ঘ ট্রেনযাত্রায় থাকা অবস্থাতেই যদি টাকাপয়সার প্রয়োজন হয়, তার সমাধান আনতে চলন্ত ট্রেনে বসানো হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় টাকা তোলার মেশিন (ATM)। এই অভিনব উদ্যোগে রেলের সহযোগী একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক।
সেন্ট্রাল রেলওয়ের অধীনস্থ মুম্বই-মানমাদ রুটের পঞ্চবটী এক্সপ্রেসে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হচ্ছে এই এটিএম (ATM)। এর ফলে গন্তব্যে পৌঁছেই ব্যাঙ্ক বা এটিএম খুঁজে বেড়ানোর ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে যাত্রীদের। এই প্রকল্প সফল হলে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনেও একই সুবিধা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলের।
সাধারণত এক্সপ্রেস ট্রেনে যেখানে প্যান্ট্রি কার থাকে, সেই জায়গাতেই বসানো হবে এটিএম (ATM) মেশিনটি। ইতিমধ্যেই পঞ্চবটী এক্সপ্রেসের একটি নির্দিষ্ট রেক মানমাদ ওয়ার্কশপে পাঠিয়ে, সেখানে এটিএম বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, এটিএম (ATM) সুরক্ষিত রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেন্ট্রাল রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক স্বপ্নিল নীলা জানান, “এই এটিএম ঘিরে ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র নিরাপত্তা থাকছে। যন্ত্রটি যাতে সঠিকভাবে কাজ করে, সে জন্যে সেটিকে রাখা হবে বাতানুকূল জায়গায়।”
এটিএম (ATM) মেশিন কার্যকর রাখতে চাই রিয়েল টাইম ব্যাঙ্ক সংযোগ, যার জন্যে প্রয়োজন সতত সক্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ। চলন্ত ট্রেনে সেই সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হবে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট। রেল নিশ্চিত করতে চাইছে, যেন যাত্রাপথে কোনও অংশেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়।
এ বিষয়ে রেলের এক আধিকারিক জানান, “পঞ্চবটী এক্সপ্রেস মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস থেকে মানমাদ পর্যন্ত যেতে সময় নেয় মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। এই সময়কালে ইন্টারনেট সক্রিয় রাখা সম্ভব। তবে অন্যান্য দীর্ঘ রুটে এটি বাস্তবায়ন করা আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।”
এই প্রকল্পটি আপাতত একটি পাইলট প্রজেক্ট। সফল হলে, অন্যান্য ট্রেন যেমন রাজধানী, দুরন্ত, শতাব্দী ইত্যাদিতেও এটিএম বসানো হতে পারে। এই উদ্ভাবনী ভাবনা ভারতীয় রেলের ডিজিটাল ও যাত্রী-সহায়ক রূপান্তরের একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রেলের এই পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেক যাত্রী। তাঁদের মতে, “লম্বা ট্রেনে যাত্রা করলে স্টেশনে নামার পর টাকার দরকার হয়, তখন যদি এটিএম না মেলে, বড় সমস্যা হয়। ট্রেনেই যদি এটিএম থাকে, তা হলে অনেকটাই সুবিধা হবে।”
এই পরিকল্পনা সত্যিই বাস্তবায়িত হলে, ভারতীয় রেল যাত্রী পরিষেবার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
রেলের এই পদক্ষেপ শুধু আর্থিক লেনদেনের সুবিধাই নয়, বরং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দিকে এক বড় পদক্ষেপ। এখন অপেক্ষা, পঞ্চবটী এক্সপ্রেসের এই পাইলট প্রজেক্ট কতটা সফল হয়, এবং তা আগামী দিনে কতদূর বিস্তৃত হয়।