হিমাচলে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ধস, ৪০০ কোটির সম্পত্তির ক্ষতি

শিমলা: বর্ষা নামতেই বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh)। গত ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত এবং একের পর এক মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান ও…

হিমাচলে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ধস, ৪০০ কোটির সম্পত্তির ক্ষতি

শিমলা: বর্ষা নামতেই বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh)। গত ২০ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত এবং একের পর এক মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান ও ধসের ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তর ভারতের এই পাহাড়ি রাজ্যে। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৭ জনেরও বেশি। নিখোঁজ বহু, ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে বিপর্যয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মান্ডি, সিমলা, কারসগ, ধরমপুর, থুনাগ এবং বাগসায়ার মতো জেলাগুলিতে। মান্ডি জেলার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। শুধু মান্ডিতেই ৪০ জন নিখোঁজ বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

   

হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh) রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের (SDMA) হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৪০০ কোটিরও বেশি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একাধিক গ্রাম কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধসে চাপা পড়ে বহু বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

অত্যধিক বৃষ্টিপাতে রাজ্যের ৫০০-র বেশি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কগুলির একাধিক অংশ ধসে পড়েছে বা ভেসে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, ফলে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (SDRF) একাধিক দল উদ্ধার কাজে নেমেছে। যাঁরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন, তাঁদের উদ্ধারে চলছে চেষ্টা। তবে টানা বৃষ্টিতে উদ্ধার কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisements

ডিসি রানা, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বিশেষ সচিব, জানিয়েছেন, “আমরা আপাতত উদ্ধার কাজ এবং নিখোঁজদের খোঁজাতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এখনই ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়।” প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩৭ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও বাড়ছে।

মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী সোমবার পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশের প্রায় সমস্ত জেলায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পাহাড়ি ধস ও হড়পা বানের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ গবেষক ও আবহাওয়াবিদদের মতে, হিমাচলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অত্যন্ত প্রকট। অতি বৃষ্টির ধারা এবং আকস্মিক বন্যা আগামী দিনগুলোতেও এভাবে বারবার ফিরে আসবে।

বর্তমানে হিমাচল প্রদেশে মানবিক বিপর্যয়ের চেহারা নিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যাঁরা নিখোঁজ, তাঁদের পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। প্রচুর মানুষ গৃহহীন। খাবার, জল ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দুর্বিষহ সময় পার করছেন পাহাড়ি অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এখন সব আশার দৃষ্টি প্রশাসনের দিকে— উদ্ধার অভিযান কত দ্রুত ও কার্যকর হয়, তার ওপর নির্ভর করছে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার ভবিষ্যৎ।