Fighter Jet: ভারত দ্রুত তার পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান AMCA (অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট) তৈরিতে কাজ করছে। এই প্রকল্পটি দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে স্বনির্ভর করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। এখন দুটি বড় বিদেশী কোম্পানি এই বিমানের ইঞ্জিনের জন্য ভারতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হল, উভয় কোম্পানিই ভারতকে ইঞ্জিনের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সম্পূর্ণ অধিকার (আইপিআর) দিতে প্রস্তুত। এই বড় কোম্পানিগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের সাফরান এবং ব্রিটেনের রোলস-রয়েস।
AMCA প্রকল্পটি কী?
AMCA, অর্থাৎ অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট, ভারতের স্বদেশী পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট প্রকল্প। লক্ষ্য হলো এমন একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করা যা গোপনে চলবে, সুপারক্রুজ (অতিরিক্ত বার্নার ছাড়াই দ্রুত উড়তে সক্ষম) এবং এআই-ভিত্তিক উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থায় সজ্জিত থাকবে। প্রথম উড্ডয়ন ২০২৮-৩০ সালের মধ্যে হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এটি ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনাতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে এই পুরো মিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এর ইঞ্জিন।
ভারতের ইঞ্জিনের প্রয়োজনীয়তা
AMCA-র জন্য ১১০-১৩০ কিলোনিউটন (kN) থ্রাস্ট সহ একটি ইঞ্জিন প্রয়োজন এবং যা বিভিন্ন উড্ডয়নের পরিস্থিতিতে ভালো পারফর্ম করতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘ভেরিয়েবল সাইকেল টেকনোলজি’ (VCT), যা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ইঞ্জিন প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
Variable Cycle Engine (VCE) কী?
Variable Cycle Engine পরিবর্তনশীল সাইকেল ইঞ্জিন এমন একটি প্রযুক্তি যা উড্ডয়নের সময় ইঞ্জিনের ভিতরে বাতাস এবং জ্বালানির প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে। এর ফলে এই ইঞ্জিন সুপারসনিক গতিতে আরও বেশি থ্রাস্ট প্রদান করতে পারে, কম উচ্চতায় জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারে এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ (তাপ পরিচালনা করার ক্ষমতা) শক্তিশালী করতে পারে। এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কয়েকটি নির্বাচিত দেশেই পাওয়া যায়। এখন ভারতও এই সুযোগ পাচ্ছে।
সাফরান এবং রোলস-রয়েস কী অফার করেছে?
উভয় কোম্পানিই ভারত সরকার এবং ডিআরডিও-র কাছে এই অফারটি দিয়েছে:
- ভারতের সহযোগিতায় পরিবর্তনশীল সাইকেল ইঞ্জিন প্রযুক্তি তৈরি করা হবে।
- ১১০-১৩০ কেএন থ্রাস্ট ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন ভারতেই তৈরি করা হবে।
- সম্পূর্ণ কারিগরি জ্ঞান (ToT) এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার (IPR) ভারতে হস্তান্তর করা হবে।
- ভারত ভবিষ্যতে ইঞ্জিন রফতানির সম্পূর্ণ স্বাধীনতাও পাবে। এর অর্থ হল এটি কেবল একটি ক্রয় নয়, বরং ভাগ করে নেওয়া উন্নয়ন এবং স্বনির্ভরতার একটি মডেল হবে।
ভারত কী পাবে?
ভারত যদি এই কোম্পানিগুলির মধ্যে একটিকে বেছে নেয়, তাহলে তারা বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ইঞ্জিন প্রযুক্তি, সম্পূর্ণ নকশা এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান, দেশেই ইঞ্জিন তৈরির সুবিধা এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য যুদ্ধবিমান বা রফতানির জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। এর ফলে, ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্প কেবল ভোক্তা হিসেবেই নয়, বরং একটি প্রস্তুতকারক এবং রফতানিকারক হিসেবেও আবির্ভূত হবে।
সামনের পথ কী?
এখন DRDO এবং GTRE (গ্যাস টারবাইন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন কোম্পানি ভারতের স্বার্থে ভালো প্রমাণিত হবে। উভয় কোম্পানিই তাদের নিজ নিজ জায়গায় শক্তিশালী, কিন্তু যে কোম্পানি ভারতকে সর্বাধিক প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অধিকার দেবে তাকেই বেছে নেওয়া হবে।