কলকাতা: পটনা মডেলের পথে এবার বাংলা! সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, আগামী অগাস্ট মাস থেকেই নির্বাচন কমিশন (Election Commission) পশ্চিমবঙ্গে শুরু করতে চলেছে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা (Special and Intensive Revision of Electoral Rolls)। শেষবার এই ধরনের তালিকা যাচাই হয়েছিল ২০০২ সালে। তারপর দীর্ঘ দুই দশক পর ফের ভোটার তালিকার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণে নামছে কমিশন। আর এই পদক্ষেপ ঘিরেই রাজ্য রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা।
মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই কি সত্যি হতে চলেছে?
নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্বাশঙ্কাই যেন সত্যি হতে চলেছে বলে মনে করছে তৃণমূল। সূত্র বলছে, বিহারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে বাংলায় না ঘটে, সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন। কারণ বিহারে এই নিবিড় সমীক্ষার সময় তালিকা বিভ্রাটের অভিযোগ উঠেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ বৈধ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবারই তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানিয়ে দেয়, বিহারের মতো হঠাৎ ও দ্রুতগতিতে এই সমীক্ষা বাংলায় করা চলবে না। তাঁদের বক্তব্য, “ভোটার তালিকা সংবেদনশীল বিষয়। সময় নিয়ে এই কাজ করতে হবে। না হলে বৈধ ভোটারদের বাদ যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।” তৃণমূলের দাবি, বিহারে সমীক্ষার কারণে প্রায় ২ কোটিরও বেশি ভোটার বাদ পড়তে পারেন—এমনটা বাংলায় চলবে না।
সমীক্ষার কাঠামো ও পদ্ধতি
কমিশন (Election Commission) সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সমীক্ষার জন্য প্রতিটি জেলার জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক, ইলেক্টরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) সমন্বয়ে একটি দল গঠন করা হবে।
সমীক্ষা চলাকালীন—
প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই করা হবে
ভোটারদের একটি ফর্ম পূরণ করে দিতে হবে
জমা দেওয়া ফর্ম অনুযায়ী তথ্য পর্যালোচনা ও যাচাই করবে নির্বাচন কমিশন
বিভ্রান্তি বা অসঙ্গতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে
কেন এই পদক্ষেপ?
সম্প্রতি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও বিহারের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় কারচুপি, ভূতুরে ভোটার এবং ডুপ্লিকেট নাম থাকার অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। বাংলাতেও এই অভিযোগ বারবার উঠেছে। সেই প্রেক্ষিতেই নির্বাচন কমিশন (Election Commission) ভোটার তালিকা পরিষ্কার ও নির্ভুল করতে চায়।
সংবিধানের জনগণের প্রতিনিধিত্ব আইন, ধারা ২১ অনুযায়ী, কমিশনের (Election Commission) অধিকার রয়েছে এমন নিবিড় সমীক্ষা চালিয়ে কারা প্রকৃত ভোটার, তা যাচাই করার।
আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সমীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একদিকে যেমন স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করবে, তেমনি ভোটার তালিকার নির্ভুলতা রক্ষা করবে। তবে এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর এবং বিতর্ক যে চলবে, তা এখন থেকেই স্পষ্ট।