কলকাতা: রাজ্যের সমস্ত সরকার পোষিত কলেজে পরিচালন সমিতির মেয়াদ আরও ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে বুধবার একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, বর্তমানে যেসব পরিচালন সমিতি কার্যরত রয়েছে, তারা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবে।
এই নির্দেশিকাটি প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষাঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কসবা আইন কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিতর্কিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই সময়সীমা বৃদ্ধি আরও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন শিক্ষা মহলের অনেকে।
উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যেসব পরিচালন সমিতির মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে বা আগামী দিনে শেষ হওয়ার কথা, সেগুলিকে নতুন করে গঠন করার প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বর্তমানে কার্যরত পরিচালন সমিতিগুলিই দায়িত্বে থাকবে।
কসবা আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিচালন সমিতি বাতিল করে পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করার মতো। আমরা পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।”
পরিচালন সমিতির মেয়াদ বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের প্রায় সব সরকারি কলেজেই প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থায়িত্ব বজায় থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কলেজগুলির প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, শিক্ষক নিয়োগ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন এবং ছাত্রসেবা ইত্যাদি কাজ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই মেয়াদ বৃদ্ধি সহায়ক হবে।
শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে যাতে কোনো প্রশাসনিক শূন্যতা না তৈরি হয়, সেজন্যই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে একাংশ মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই পরিচালন সমিতি কার্যরত থাকলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির প্রশ্নে উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে পরিচালন সমিতির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যেমন প্রশাসনিক দিক থেকে কার্যকর, তেমনি কসবা আইন কলেজের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্বও বর্তায় এই পরিচালন কমিটিগুলির উপর। শিক্ষামন্ত্রীর সরব হওয়া এই প্রসঙ্গে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, যা ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার দিকটিকে আরও গুরুত্ব দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।