EPF Savings: অবসরের জন্য আগেভাগেই পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে না, বরং কর্মজীবন শেষে অর্থনৈতিক চাপ থেকেও মুক্তি দেয়। ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকের আয় কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে এই সময়টিতে সঞ্চয়কৃত অর্থই জীবনের মূল ভরসা হয়ে ওঠে। সরকারও এই সময়ের জন্য নানা ধরনের স্কিম বা প্রকল্প নিয়ে এসেছে, যা বয়স্কদের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে একটি হলো এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ), যা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO) দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই স্কিমটি মূলত সংগঠিত ক্ষেত্রের বেতনভুক্ত কর্মচারীদের জন্য তৈরি। এর লক্ষ্য হলো, চাকরির সময়কালেই ধীরে ধীরে সঞ্চয় গড়ে তোলা যাতে অবসরের পর অর্থের অভাবে সমস্যায় না পড়তে হয়।
ইপিএফের দুটি অংশ রয়েছে—Employees’ Provident Fund Scheme (EPF) এবং Employees’ Pension Scheme (EPS)। ইপিএফের মাধ্যমে নিয়মিত সঞ্চয় হয় এবং তার উপর সুদও মেলে। অপরদিকে, ইপিএসের মাধ্যমে অবসরের পর পেনশন সুবিধা পাওয়া যায় বা কর্মচারীর মৃত্যুর পরে তার নির্ভরশীলদের জন্য পেনশন প্রদান করা হয়।
কর্মচারী ও নিয়োগকর্তা দুজনেই বেসিক বেতন এবং ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স (DA)-এর উপর ভিত্তি করে ১২% হারে ইপিএফে অবদান রাখেন। এর মধ্যে নিয়োগকর্তার ১২% অবদানের ৮.৩৩% EPS-এ যায় এবং বাকি ৩.৬৭% ইপিএফে জমা হয়।
কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ড প্রতি অর্থবছরে ইপিএফের সুদের হার নির্ধারণ করে। সুদ প্রতি বছর একবার জমা হয় এবং এটি করমুক্ত। FY2024-25 এর জন্য সরকার ইপিএফের সুদের হার ৮.২৫% ধার্য করেছে।
বেশিরভাগ ইপিএফ গ্রাহকের মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন জাগে—দীর্ঘ সময় ধরে সঞ্চয় করলে কত টাকা হাতে আসবে? যেমন, ১০, ১৫, ২০ বছর পরে কত টাকা পাওয়া যাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা একটি সাধারণ হিসাব করেছি।
পিএফ ক্যালকুলেশন:
ধরা হয়েছে—
বেসিক বেতন + DA: মাসিক ২৫,০০০ টাকা
কর্মচারীর অবদান: বেতনের ১২%
নিয়োগকর্তার অবদান: বেতনের ১২% (যার মধ্যে ৮.৩৩% পেনশনে, বাকি ইপিএফে)
সুদের হার: ৮.২৫% প্রতি বছর (FY2024-25 অনুসারে)
পুরো সময়কালে কোনো টাকা তোলা হয়নি
মাসিক ২৫,০০০ টাকার বেতনের ওপর কর্মচারীর অবদান হবে ৩,০০০ টাকা (২৫,০০০-এর ১২%)। নিয়োগকর্তার ইপিএফ অংশের অবদান হবে প্রায় ৯১৭.৫ টাকা (৩.৬৭%)। অর্থাৎ, মোট মাসিক অবদান হবে প্রায় ৩,৯১৭.৫ টাকা। বছরে এটি প্রায় ৪৭,০১০ টাকা হয়।
এছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে ধরা হয়েছে—
বেতন অপরিবর্তিত থাকবে
সুদের হার স্থির থাকবে
কোনো সময় টাকা তোলা হবে না
এই হিসাব অনুযায়ী,
১০ বছর পরে আনুমানিক পরিমাণ হবে প্রায় ৭.৪৫ লাখ টাকা।
১৫ বছর পরে পরিমাণ হবে প্রায় ১৪.০৮ লাখ টাকা।
২০ বছর পরে এই সঞ্চয় দাঁড়াবে প্রায় ২৩.০৯ লাখ টাকায়।
এটি শুধু ইপিএফ অংশের হিসাব। পেনশনের অংশ বা EPS এর টাকা আলাদা। এই সঞ্চয় অবসরের পর এককালীন টাকা হিসেবে তোলা যাবে বা আংশিকভাবে তোলাও সম্ভব।
অল্প বয়সে অবসরের জন্য সঞ্চয় শুরু করলে সুদের জাদু বা কম্পাউন্ডিং ইফেক্টের কারণে সঞ্চয়ের পরিমাণ অনেকগুণ বেড়ে যায়। প্রতিটি মাসের অবদান ধীরে ধীরে বড় আকারের তহবিলে রূপ নেয়। অবসরের সময় এই টাকা স্বাস্থ্য খরচ, দৈনন্দিন খরচ, অথবা কোনো স্বপ্ন পূরণে কাজে লাগতে পারে।
সরকারের এই ধরনের স্কিমের মাধ্যমে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে আরও সচেতন হয়ে উঠছে। কর্মজীবনে যে বেতন পাওয়া যায়, তার ছোট একটি অংশ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের জন্য বড় ফান্ড গড়ে তোলা সম্ভব।
আজকের দিনে যখন চিকিৎসা খরচ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ ক্রমেই বাড়ছে, তখন এই ধরনের সুরক্ষিত সঞ্চয় স্কিমের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। ইপিএফ একদিকে ট্যাক্স বেনিফিট দেয়, অন্যদিকে রিটায়ারমেন্টের পর নিশ্চিন্ত জীবনের পথও প্রশস্ত করে।
যদি আপনি এখনো ইপিএফের মাধ্যমে সঞ্চয় শুরু না করে থাকেন, তবে যত দ্রুত সম্ভব এই পরিকল্পনা শুরু করা উচিত। কারণ, সময় যত বেশি, কম্পাউন্ডিংয়ের প্রভাব তত বড়। ফলে, অবসরের সময় বড় অঙ্কের সঞ্চয় গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
অ
বশেষে বলা যায়, ইপিএফ একটি নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যম, যা প্রত্যেক কর্মচারীর আর্থিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। এখনই পরিকল্পনা করুন এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যান।