নয়াদিল্লি: ভারতজুড়ে হঠাৎ আলোড়ন তুলেছিল এক অদ্ভুত ঘটনা৷ একদিনের জন্য পাকিস্তানের একঝাঁক তারকা ও জনপ্রিয় বিনোদন চ্যানেলের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ভারতীয় দর্শকদের সামনে খুলে যায়!
হঠাৎ খুলে যায় পাক তারকাদের অ্যাকাউন্ট
২ জুলাই রাত থেকে ইনস্টাগ্রামে দেখা যায় সাবা কামার, মাওরা হোসেন, ইউমনা জায়দী, দানিশ তাইমুর, আর আহাদ রেজা মীরের প্রোফাইল৷ যাদের প্রোফাইল এতদিন দেখা যাচ্ছিল না। শুধু অভিনেতাই নয়, পাকিস্তানি ক্রিকেট তারকা শাহিদ আফ্রিদি ও শোয়েব আখতারের ইউটিউব চ্যানেল এবং হুম টিভি, আরওয়াই ডিজিটাল, হার পাল জিও-র কনটেন্টও সাময়িকভাবে চালু হয়ে যায় ভারতীয় ইউজারদের জন্য।
কিন্তু এই ‘রিইউনিয়ন’ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পরদিন সকালেই সবকিছু আগের মতো—অ্যাক্সেস নিষিদ্ধ। স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সেই পরিচিত বার্তা: “এই অ্যাকাউন্টটি ভারতে উপলব্ধ নয়। এটি একটি আইনি অনুরোধের ভিত্তিতে এই সামগ্রী সীমিত করার ফলে হয়েছে।’’
সরকার বলছে ‘টেকনিক্যাল গ্লিচ’ Pakistan Social Media India Glitch
সরকারি সূত্রের দাবি, এটি কোনো নীতিগত পরিবর্তন নয়, বরং প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের নির্দেশ কার্যকর করতে দেরি হওয়ার ফল। এখনও কিছু ইউজার আংশিকভাবে কিছু অ্যাকাউন্ট দেখতে পাচ্ছেন, তবে সেগুলোও দ্রুত ব্লক হয়ে যাবে।
বর্তমানে ভারতে প্রায় ১৮ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল নিষিদ্ধ, যার মধ্যে আছেন সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার, মিডিয়া সংস্থা এবং বিনোদন প্ল্যাটফর্ম।
আইনের ছত্রছায়ায় কড়াকড়ি
এই ডিজিটাল ব্লকাড আসছে ২০২১ সালের তথ্য প্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস ও ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) রুলস-এর অধীনে, যার সাম্প্রতিক নির্দেশিকা ২০২৫ সালের ৮ মে জারি হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়, পাকিস্তানি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও স্ট্রিমিং চ্যানেল থেকে প্রকাশিত যেকোনো কনটেন্ট—ওয়েব সিরিজ, গান, সিনেমা, এমনকি টিভি ড্রামা-ভারতে নিষিদ্ধ। নেপথ্য কারণ? জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও জনশান্তির স্বার্থ।
AICWA: “চূড়ান্ত ডিজিটাল ব্ল্যাকআউট চাই”
এই একদিনের ‘ডিজিটাল কামব্যাক’ রীতিমতো ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে অল ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (AICWA)-এর মধ্যে। তারা একে “জাতীয় অপমান” হিসেবে দেখেছে, বিশেষ করে যেসব পরিবার সীমান্তপারের সন্ত্রাসে প্রিয়জন হারিয়েছে, তাদের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ করে তারা লিখেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সব সম্পর্ক সম্পূর্ণ ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে। তাদের মতে, পাকিস্তান একটি “সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র”, যারা ২৬/১১, পুলওয়ামা, উরি ও সর্বশেষ পহালগাম হামলার মতো জঘন্য কাজের জন্য দায়ী।
সন্ত্রাস, কূটনীতি এবং পাল্টা পদক্ষেপ
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে এ বছর এপ্রিলের পহেলগাঁও হামলার পর, যেখানে পর্যটক কনভয়ে হামলায় ২৬ জন নিহত হন। দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’, যেটি নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা-র শাখা এবং পাকিস্তান থেকেই পরিচালিত।
এরপর ভারত নেয় একের পর এক কড়া পদক্ষেপ:
পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমানো
ইন্দুস ওয়াটার ট্রিটি (১৯৬০) স্থগিত
অপারেশন সিঁদুর: সীমান্ত পেরিয়ে ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে সুনির্দিষ্ট হামলা
এই ঘটনার পর পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের ভারতবিরোধী মন্তব্য ও ভারতের সামরিক কৌশলের সমালোচনা দেশজুড়ে বয়কটের দাবিকে আরও জোরালো করে তোলে।
পাকিস্তানি তারকাদের আকস্মিক ডিজিটাল উপস্থিতি যতটা আকর্ষণীয় ছিল, ঠিক ততটাই তা সংবেদনশীল। ভুল হোক বা গ্লিচ, বাস্তবটা স্পষ্ট-বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শিল্প ও বিনোদনও কূটনীতির অংশ হয়ে উঠেছে।