ভারতের স্মার্টফোন বাজার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হিসেবে পরিচিত, এবং এখানে স্যামসাং এবং শাওমির (Samsung vs Xiaomi) মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। ২০২৫ সালে এই দুই ব্র্যান্ডের মধ্যে কে ভারতীয় স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে। স্যামসাং এবং শাওমি উভয়ই তাদের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি ফোন এবং আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ভারতীয় গ্রাহকদের মন জয় করার চেষ্টা করছে। তবে, বাজারের শেয়ার, চালানের পরিমাণ এবং গ্রাহক পছন্দের দিক থেকে কে এগিয়ে? এই নিবন্ধে আমরা ২০২৫ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিযোগিতার বিশ্লেষণ করব।
২০২৫ সালে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের পরিস্থিতি
২০২৫ সালে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে মোট ১৫৩ মিলিয়ন ইউনিট চালান হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজারে ৫জি স্মার্টফোনের চালান ৭৮% পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা গ্রাহকদের মধ্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং উন্নত প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার ইঙ্গিত দেয়। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিভো ১৬.৬% বাজার শেয়ার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, যখন স্যামসাং এবং শাওমি যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে। স্যামসাং-এর বাজার শেয়ার ১৩.২% এবং শাওমির ১২.০%, যা দেখায় যে এই দুই ব্র্যান্ডের মধ্যে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কাছাকাছি।
স্যামসাং-এর শক্তি এবং কৌশল
স্যামসাং ভারতীয় বাজারে তার শক্তিশালী উপস্থিতির জন্য পরিচিত। ২০২৫ সালে, স্যামসাং তার গ্যালাক্সি এস২৫ সিরিজ এবং গ্যালাক্সি এ সিরিজের মাধ্যমে প্রিমিয়াম এবং মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে গ্রাহকদের আকর্ষণ করছে। কোম্পানিটি তার উচ্চমানের AMOLED ডিসপ্লে, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট এবং বিক্রয়োত্তর পরিষেবার জন্য গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে। স্যামসাং-এর অনলাইন চ্যানেলে নেতৃত্ব এবং নয়ডায় অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা এটিকে স্থানীয় উৎপাদনের সুবিধা প্রদান করে। তবে, ২০২৪ সালে স্যামসাং-এর চালান ১৯.৪% হ্রাস পেয়েছে, যা চীনা ব্র্যান্ডগুলির তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে। এই পতন সত্ত্বেও, স্যামসাং প্রিমিয়াম সেগমেন্টে ($৬০০-$৮০০) ৩০% বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে, যেখানে গ্যালাক্সি এস২৩ এবং এস২৪ মডেলগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
শাওমির প্রত্যাবর্তন এবং কৌশল
শাওমি, যিনি ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ভারতীয় বাজারে শীর্ষে ছিলেন, ২০২৫ সালে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। তবে, শাওমি তার সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি ফোন, যেমন রেডমি ১৩সি এবং রেডমি নোট সিরিজ, এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। ২০২৪ সালের জুন ত্রৈমাসিকে শাওমি ১৮% বাজার শেয়ার নিয়ে শীর্ষে ফিরেছিল, যা তার বাজেট-বান্ধব মডেল এবং অফলাইন বিক্রয় সম্প্রসারণের ফলাফল। শাওমি এন্ট্রি-লেভেল ($১০০ এর নিচে) এবং মাস-বাজেট সেগমেন্টে ($১০০-$২০০) নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে এটি ২০২৪ সালে রেডমি ১৩সি-এর মতো মডেলের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে, শাওমির বাজার শেয়ার ২০২১ সালের ২৭.৩১% থেকে ২০২৫ সালে ১২.০% এ নেমে এসেছে, যা ম্যাক্রোইকোনমিক চ্যালেঞ্জ এবং চীনা ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সমস্যার কারণে।
বাজারের গতিশীলতা এবং প্রতিযোগিতা
২০২৫ সালে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে চীনা ব্র্যান্ডগুলি (শাওমি, ভিভো, অপ্পো, রিয়েলমি) সম্মিলিতভাবে ৫৯% বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে। শাওমি তার সাশ্রয়ী মূল্য এবং উচ্চ-কার্যক্ষমতার ফোনের মাধ্যমে বাজেট সেগমেন্টে আধিপত্য বজায় রেখেছে, যেখানে স্যামসাং প্রিমিয়াম এবং মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। স্যামসাং-এর গ্যালাক্সি এ৩৬ এবং এ৫৬ মডেলগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বৈশিষ্ট্য সহ মিড-রেঞ্জে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অন্যদিকে, শাওমির রেডমি সিরিজ গেমিং এবং দ্রুত চার্জিংয়ের জন্য তরুণ গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয়।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
স্যামসাং এবং শাওমি উভয়ই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। স্যামসাং-এর জন্য চীনা ব্র্যান্ডগুলির কম দামের ফোন এবং অফলাইন বাজারে তাদের সম্প্রসারণ একটি চ্যালেঞ্জ। শাওমির জন্য, নিয়ন্ত্রক সমস্যা এবং প্রিমিয়াম সেগমেন্টে সীমিত উপস্থিতি বাধা সৃষ্টি করছে। তবে, শাওমির অফলাইন বিক্রয় কৌশল এবং ৫জি ফোনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এটিকে পুনরায় শীর্ষে ফেরার সুযোগ দিচ্ছে। আইডিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ভারতের স্মার্টফোন বাজার মাঝারি একক-অঙ্কের বৃদ্ধি পাবে, যা উভয় ব্র্যান্ডের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
২০২৫ সালে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং এবং শাওমির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। স্যামসাং তার প্রিমিয়াম ডিভাইস, বিক্রয়োত্তর পরিষেবা এবং স্থানীয় উৎপাদনের সুবিধার মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে, যখন শাওমি তার সাশ্রয়ী মূল্যের ৫জি ফোন এবং অফলাইন সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাজেট সেগমেন্টে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যদিও ভিভো বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে, স্যামসাং এবং শাওমির কাছাকাছি বাজার শেয়ার এই প্রতিযোগিতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ভবিষ্যতে, যে ব্র্যান্ডটি উদ্ভাবন, মূল্য নির্ধারণ এবং বিতরণ কৌশলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে, তারাই ভারতীয় বাজারে আধিপত্য বিস্তার করবে।