হোম লোন ইএমআই মিস করলে ফাইন্যান্সিয়াল বিপদ! এড়ানোর ৫টি উপায়

বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই হোম লোনের (Home Loan) আশ্রয় নেন। তবে এই লোনই জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়, যা ২০ থেকে…

7 Expert Tips to Get Home Loan Approval Faster in India

বাড়ির স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেকেই হোম লোনের (Home Loan) আশ্রয় নেন। তবে এই লোনই জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়, যা ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্তও চলতে পারে। তাই এই লোনের ইএমআই (মাসিক কিস্তি) সময়মতো পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেক সময় নানা কারণে ইএমআই মিস হলে তা একদিনের ভুল নয়, ভবিষ্যতে বড়সড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।

ইএমআই মিস করলে প্রথমেই কী হয়?
সাধারণত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইএমআই-এর নির্দিষ্ট তারিখের পর ৫–১৫ দিনের একটি গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে থাকে। এই সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ করা না হলে ‘লেট পেমেন্ট চার্জ’ হিসেবে ১–২ শতাংশ হারে মাসিক জরিমানা ধার্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার মাসিক ইএমআই ৪৫,০০০ টাকা হলে, ২ শতাংশ জরিমানায় আপনাকে অতিরিক্ত ৯০০ টাকা দিতে হবে।

   

আর্থিক জরিমানার বাইরেও রয়েছে আরও বড় বিপদ — ক্রেডিট স্কোরের ক্ষতি। ইএমআই মিস করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর ৩০–৫০ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এ ধরনের ডিফল্ট ব্যাংক এবং অন্যান্য ঋণদাতাদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেয়, যা ভবিষ্যতে নতুন লোন পেতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বড় ধরনের ডিফল্টের পরিণতি:
যদি ৯০ দিনের বেশি সময় ইএমআই বাকি থাকে, তখন তা ‘মেজর ডিফল্ট’ হিসেবে ধরা হয়। এই অবস্থায় ব্যাংক প্রথমে আইনি নোটিশ পাঠায়। তাতেও সাড়া না পেলে, চূড়ান্ত পর্যায়ে আপনার বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তোলা হতে পারে। এই প্রক্রিয়া শুধু মানসিক চাপই নয়, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ক্ষতি এবং সামাজিক সম্মানকেও প্রভাবিত করে।

ক্রেডিট স্কোর ও সুদের হার:
আপনার ক্রেডিট স্কোরের ওপর নির্ভর করে লোনের সুদের হার। ৭৫০-এর বেশি স্কোর থাকলে আপনি কম সুদে লোন পেতে পারেন, যেমন ৮.৫ শতাংশ। আর যদি স্কোর ৭২০-এর নিচে নেমে যায়, তখন সুদ বেড়ে ৯.৫ শতাংশ বা তারও বেশি হতে পারে। ৫০ লাখ টাকার হোম লোনের ক্ষেত্রে এই ১ শতাংশ পার্থক্য মানে প্রায় ৬.৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ!

Advertisements

মিস করলে কী করবেন?
ইএমআই মিস করলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ব্যাংককে তৎক্ষণাৎ জানান:
প্রথমেই ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সৎভাবে সমস্যার কারণ জানান। প্রায় সব ব্যাংকই আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা দেখায়।
দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করুন:
যদি মিসের কারণ কোনো তুচ্ছ ভুল হয়, যেমন অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা, তাহলে দ্রুত বকেয়া মিটিয়ে ফেলুন। ভবিষ্যতে অটো-ডেবিট অপশন চালু করুন এবং অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার দিকে নজর দিন।
খরচে কড়াকড়ি আনুন:
যদি চাকরি হারানো বা আয়ের ঘাটতির কারণে ইএমআই মিস হয়, তবে অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করুন। প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি ফান্ড ব্যবহার করে ইএমআই মেটান।

লোন রিস্ট্রাকচারিংয়ের কথা ভাবুন:
লোনের মেয়াদ বাড়িয়ে ইএমআই কমানোর জন্য ব্যাংকের কাছে আবেদন করুন বা কিছু সময়ের জন্য মরাটোরিয়াম চাইতে পারেন। তবে এগুলো করতে হলে সময়মতো ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

অন্য বাসায় থাকুন ও ফ্ল্যাট ভাড়া দিন:
যদি চাপ খুব বেশি হয়, নিজের ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে ছোট বাসায় উঠে যান। সেই ভাড়ার আয় দিয়ে ইএমআই চালিয়ে যেতে পারেন।

ঋণ কনসলিডেশন করুন:
যদি একাধিক ঋণ থাকে, সেগুলো একত্র করে কম সুদের হারে কনসলিডেশন করুন। এতে মাসিক দায় কিছুটা কমবে।
ইএমআই মিস মানে শুধু একটি তারিখের ভুল নয় — এটি আপনার আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতিফলন। একবার মিস হলে হয়তো সামলে নেওয়া যায়, কিন্তু বারবার মিস করলে ভবিষ্যতে কোনো লোন পেতে সমস্যা হবে এবং আপনার সুদের হারও বেড়ে যাবে।
বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে যেন সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত না হয়, সেজন্য প্রয়োজন আর্থিক শৃঙ্খলা। ইএমআই মিস হলে দ্রুত ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, কারণ সঠিক সময়ে নেওয়া পদক্ষেপই পারে আপনার সম্পত্তি ও সম্মান রক্ষা করতে। নিজের ফিনান্স প্ল্যানিং শক্ত রাখুন, ইমার্জেন্সি ফান্ড গড়ে তুলুন এবং সবসময় খেয়াল রাখুন যাতে ইএমআই সময়মতো মেটানো যায়।