দেশের ক্রমবর্ধমান ওয়ার্কফোর্সে ফ্রিল্যান্সার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং গিগ ওয়ার্কারদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এরা অনেকেই কোনো স্থায়ী চাকরির কাঠামোর মধ্যে পড়েন না, ফলে তাদের আয় ও কর সংক্রান্ত দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে কিছুটা আলাদা। যদিও FY2025-26 এর আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন ফাইল করা উচিত।
কোন ITR ফর্ম ব্যবহার করবেন?
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA) ডঃ সুরেশ সুরানা জানিয়েছেন, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য মূলত ITR-৩ অথবা ITR-৪ ফর্ম প্রযোজ্য। যদি কেউ সেকশন 44ADA অনুযায়ী প্রিসাম্পটিভ ট্যাক্সেশন স্কিমে যান, তাহলে ITR-৪ (সুগম) ফর্ম ব্যবহার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, মোট আয়ের ৫০% কে নেট প্রফিট ধরে নেওয়া হয়।
যারা প্রকৃত আয় এবং খরচের হিসাব দেখাতে চান বা যাদের রসিদ প্রিসাম্পটিভ সীমার (প্রায় ৩ কোটি টাকা, যদি নগদ লেনদেন ৫% এর কম হয়) বেশি, তাদের ITR-৩ ফাইল করতে হবে। বিশেষ করে, যারা বই অফ অ্যাকাউন্টস রক্ষা করেন, তাদের এই ফর্ম প্রযোজ্য।
ফ্রিল্যান্সারদের আইনি সংজ্ঞা নেই, তবে করের ধরন স্পষ্ট:
ইনকাম ট্যাক্স আইনে “ফ্রিল্যান্সার” বা “গিগ ওয়ার্কার” শব্দের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, আয়ের প্রকৃতি অনুযায়ী তা ব্যবসা বা প্রফেশনাল ইনকামের হিসেবে গণনা করা হয়। অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সারের আয়কে পেশাগত আয় হিসেবে বিবেচনা করে কর ধার্য করা হয়।
ফ্রিল্যান্সাররা কি ছাড় (deduction) নিতে পারেন?
হ্যাঁ। সুরানা এবং ফরভিস মাজার্স ইন্ডিয়ার পার্টনার গৌরব জৈন দুইজনই জানিয়েছেন, ফ্রিল্যান্সাররা পেশাগত কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, ইন্টারনেট বিল, সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন, ট্রাভেল খরচের মতো খরচের ছাড় নিতে পারেন।
যেমন, ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য নেওয়া ল্যাপটপের মূল্যে ৪০% হারে depreciation দাবি করা যায়। তবে সুরানা সতর্ক করে বলেন, যারা সেকশন 44ADA অনুযায়ী presumptive scheme নেন, তারা পৃথকভাবে কোনো খরচের ছাড় নিতে পারবেন না। সেই ক্ষেত্রে আয়ের ৫০% সরাসরি করযোগ্য মুনাফা হিসেবে ধরা হয়।
ফ্রিল্যান্সারদের কাছে কোন কোন ডকুমেন্ট থাকা দরকার?
ফ্রিল্যান্সার, ক্রিয়েটর এবং গিগ ওয়ার্কারদের জন্য সঠিক নথি রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, খরচের ছাড় দাবি করতে হলে সেসব প্রমাণ রাখতে হবে।
কোন কোন ডকুমেন্ট রাখতে হবে?
ইনভয়েস ও রসিদ: ক্লায়েন্টের কাছে ইস্যু করা সব ইনভয়েস ও প্রাপ্ত অর্থের রসিদ।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট: ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা এসেছে এবং কোন খরচ হয়েছে, তার পূর্ণ বিবরণ।
কন্ট্রাক্ট বা এগ্রিমেন্ট: ক্লায়েন্টের সঙ্গে চুক্তি বা ইমেল, যেখানে কাজের শর্ত এবং পেমেন্টের নিয়ম উল্লেখ আছে।
সম্পদের কেনার রসিদ: যেমন ল্যাপটপ বা অন্য অফিস সরঞ্জাম। এগুলি depreciation-এর জন্য প্রয়োজন।
ভ্রমণের প্রমাণ: অফিস বা প্রফেশনাল কাজের উদ্দেশ্যে ভ্রমণের টিকিট, হোটেল বিল, বোর্ডিং পাস ইত্যাদি। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ভ্রমণের খরচ কোনোভাবেই ছাড় হিসাবে দেখানো যাবে না।
ইনকাম-এক্সপেন্স শিট: একটি সাধারণ খরচ-আয়ের তালিকা (নোটবুক বা স্প্রেডশিটে) রাখা সুবিধাজনক।
গৌরব জৈন বলেন, “কাগজপত্র রাখার অভ্যাস ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা presumptive tax scheme এর বাইরে, তাদের প্রকৃত খরচ প্রমাণে এসব ডকুমেন্ট অপরিহার্য।”
কেন দ্রুত রিটার্ন ফাইল করা উচিত?
অন্যদের মতো ফ্রিল্যান্সারদেরও সময়ের মধ্যে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। দেরিতে ফাইল করলে লেট ফি, সুদ এবং নোটিশের ঝুঁকি থাকে। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ায় ভুলের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা ভবিষ্যতে কর বিভাগ থেকে জবাবদিহির ঝামেলা তৈরি করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অতিরিক্ত টিপস:
আয় নিয়মিত ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে নিন।
ক্যাশ লেনদেন যত কম রাখা যায়, ততই ভালো।
বছরে অন্তত একবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পরামর্শ নিন।
ছোট ছোট খরচগুলিও লিপিবদ্ধ রাখুন, যেমন সফটওয়্যার সাবস্ক্রিপশন, ডোমেইন রিনিউয়াল ইত্যাদি।
ব্যবসার জন্য নেওয়া লোনের ইন্টারেস্টের রেকর্ডও রাখুন।
ফ্রিল্যান্সার, ক্রিয়েটর এবং গিগ ওয়ার্কাররা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাই কর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা প্রয়োজন। আয় ও খরচের সঠিক হিসাব রাখা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সবার জন্যই অপরিহার্য। যথাসময়ে ITR ফাইল করলে আইনি জটিলতা কমে এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকে।
অতএব, দেরি না করে, আজই নিজের আয়, খরচ এবং প্রমাণপত্র গুছিয়ে ফেলুন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিটার্ন ফাইল করুন। এতে ভবিষ্যতের যেকোনো কর সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।