ভারতীয় পুরুষ ফুটবল (Indian Football Team) দল যেখানে একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থতা ও হতাশায় ডুবে রয়েছে। সেখানে দেশের ফুটবল অনুরাগীদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে মহিলা ফুটবল দল (Indian Womens Football Team)। ২০২৬ সালের এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন (Asian Cup Womens Qualifer) পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচেও জয় তুলে নিল ‘ব্লু টাইগ্রেস’রা (Blue Tigresses)। বুধবার থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই স্টেডিয়ামে ভারত ৫-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিল ইরাককে (Iraq)। এই জয়ে টানা তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে অবস্থান ধরে রাখল ভারতীয় মহিলা দল।
প্রথম ম্যাচে মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩-০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে তিমুর-লেস্তের বিরুদ্ধে ৪-০ ব্যবধানে জয় পেয়েই চমৎকার আত্মবিশ্বাস নিয়ে এদিন মাঠে নামে ক্রিসপিন ছেত্রীর দল। শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেয় সঙ্গীতা বাসফোর, মনীষা কল্যাণ, কার্তিকা অঙ্গমুথুদের নেতৃত্বে দল। বল দখল থেকে শুরু করে আক্রমণ সব ক্ষেত্রেই ছিল ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য।
ম্যাচের ১৪ মিনিটে ভারতের হয়ে প্রথম গোলটি করেন অভিজ্ঞ বাঙালি মিডফিল্ডার সঙ্গীতা বাসফোর। বাঁ দিক থেকে সঞ্জুর নেওয়া কর্নার কিক ইরাকের গোলরক্ষক খালাত আলজেবারি ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে না পারায় বলটি সোজা এসে পড়ে সঙ্গীতার মাথায়, যেখান থেকে সহজেই বল জালে পাঠান তিনি।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগেই লিড দ্বিগুণ করেন মনীষা কল্যাণ। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তাঁর শট ফসকে যায় আলজেবারির হাত থেকে, ফলে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ভারত।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলরক্ষক পরিবর্তন করে ইরাক। ফায়েজা মাহমুদের আগমনে কিছুটা স্বস্তির চেষ্টা করলেও, ম্যাচের মাত্র তিন মিনিট পরেই ফের গোল হজম করে তারা। মাঝমাঠ থেকে ২৫ গজ দূর থেকে কার্তিকা অঙ্গমুথু যেভাবে বলটি লব করে জালে পাঠালেন, তা নিঃসন্দেহে ম্যাচের সেরা মুহূর্ত।
এরপরও থামেনি ভারতের আক্রমণ। ৬৮ মিনিটে নির্মলা দেবী মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত রকেট শটে স্কোরলাইন করেন ৪-০। শেষ গোলটি আসে ৮০ মিনিটে। রতনবালা দেবীর প্রথম শট ফিরিয়ে দেন ইরাকি গোলরক্ষক, কিন্তু ফিরতি বলেই চটজলদি শট নিয়ে নিশ্চিত করেন পঞ্চম গোল।
কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী ম্যাচের আগে যে আক্রমণাত্মক ও সংগঠিত ফুটবলের বার্তা দিয়েছিলেন, সেটি মাঠে পুরোপুরি কার্যকর করেছেন মেয়েরা। দলের প্রতিটি পজিশনে ছিল দায়িত্বশীলতা ও নিখুঁত সমন্বয়। মিডফিল্ডে সঙ্গীতা ও নির্মলার প্রভাব, উইংয়ে সঞ্জু ও মনীষার গতি এবং আক্রমণে রতনবালার ফিনিশিং দক্ষতা দলকে এনে দিয়েছে এই আধিপত্য।
পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে ভারত
তিন ম্যাচে তিন জয়, গোল পার্থক্যে +২২। এই মুহূর্তে গ্রুপের শীর্ষে রয়েছে ভারত। ৫ জুলাই কোয়ালিফায়ারের শেষ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হবে থাইল্যান্ড, যারা এই মুহূর্তে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। সেই ম্যাচ কার্যত একটি ‘ফাইনাল’-এর রূপ নিচ্ছে, কারণ গ্রুপ থেকে শুধুমাত্র শীর্ষ দলই যাবে মূল পর্বে। ফলে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে জয় বা অন্তত ড্র দরকার ভারতের মেয়েদের।
আশার আলো ‘ব্লু টাইগ্রেস’রা
যেখানে পুরুষদের ব্যর্থতা ফুটবলপ্রেমীদের হতাশ করছে, সেখানে ভারতের মহিলা ফুটবল দল যেন হয়ে উঠেছে নতুন আশার প্রতীক। মাঠে তাঁদের আত্মবিশ্বাস, সংগঠিত রক্ষণ ও সৃজনশীল আক্রমণ প্রমাণ করছে— সঠিক দিশা ও পরিকল্পনায় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ এখনো উজ্জ্বল হতে পারে। এখন নজর ৫ জুলাইয়ের দিকেই। থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পেলেই ভারত নিশ্চিত করে ফেলবে এশিয়ান কাপের টিকিট।
Indian Football Team step away from Womens Asian Cup qualification after blanking Iraq