অবসরের পর জীবনযাপন আরও সুরক্ষিত এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছন্দ করতে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ভারত সরকার একাধিক সঞ্চয় প্রকল্প চালু করেছে। এর মধ্যে সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS) বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই স্কিমটি ২০০৪ সালে চালু হয়েছিল এবং তখন থেকেই এটি দেশের লক্ষ লক্ষ প্রবীণ নাগরিকের মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে।
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS) কী?
SCSS একটি সরকার-সমর্থিত ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প যা অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য তৈরি। এখানে বিনিয়োগকারীরা এককালীন অর্থ জমা করে একটি নির্দিষ্ট সুদের হারে আয় পান, যা প্রতি ত্রৈমাসিকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০২৫ ত্রৈমাসিকের জন্য SCSS-এর সুদের হার ৮.২ শতাংশ বার্ষিক, যা আগের ত্রৈমাসিকের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।
কাদের জন্য এই স্কিম?
এই স্কিমে মূলত ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের ভারতীয় নাগরিকেরা বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে ৫৫–৫৯ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা (যারা স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছেন বা সুপারঅ্যানুয়েশন বেনিফিট পেয়েছেন), এমনকি ৫০–৫৯ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা কর্মীরাও এই স্কিমে বিনিয়োগের যোগ্য। একজন ব্যক্তি একক বা জীবনসঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। তবে, সর্বাধিক বিনিয়োগের সীমা প্রতিজনের ক্ষেত্রে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
মূল বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা:
উচ্চ সুদের হার: বর্তমানে ৮.২ শতাংশ বার্ষিক, যা প্রতি তিন মাসে একবার করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
বিনিয়োগ সীমা: ন্যূনতম ১,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
মেয়াদ: প্রাথমিকভাবে ৫ বছর, যা একবার ৩ বছরের জন্য বাড়ানো যেতে পারে।
কর সাশ্রয়: ধারা ৮০সি অনুযায়ী ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়।
সুরক্ষা: সম্পূর্ণরূপে সরকারের দ্বারা গ্যারান্টি প্রাপ্ত, ফলে ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
SCSS বনাম Fixed Deposit (FD):
যদিও অনেক প্রবীণ নাগরিক ব্যাংক FD-কে বেছে নেন, SCSS তুলনায় আরও আকর্ষণীয়। যেমন, বর্তমানে কিছু ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাংক ৫ বছরের FD-তে সর্বাধিক ৯.১ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। তবে, সেগুলোর সুরক্ষা সীমাবদ্ধ, যেখানে মাত্র ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিপোজিট ইন্সুরেন্স কাভারেজ থাকে। অন্যদিকে, SCSS-এর ক্ষেত্রে সরকারের পূর্ণ গ্যারান্টি রয়েছে।
ট্যাক্সের দিক থেকেও SCSS এবং FD দুটোই ধারা ৮০সি’র অধীনে আসে, তবে SCSS-এর সুদের উপর বার্ষিক ৫০,০০০ টাকার বেশি আয় হলে TDS কাটতে পারে।
কীভাবে SCSS অ্যাকাউন্ট খুলবেন?
SCSS অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে নিকটস্থ কোনো ডাকঘর বা অনুমোদিত ব্যাংকে যেতে হবে। সেখান থেকে SCSS ফর্ম সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় KYC ডকুমেন্টস (যেমন আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ঠিকানার প্রমাণ) এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
ডাকঘরে: যে কোনো পোস্ট অফিসে গিয়ে ফর্ম জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারবেন।
ব্যাংকে: পাবলিক বা প্রাইভেট সেক্টরের অনুমোদিত ব্যাংকে গিয়ে ফর্ম জমা দিন।
অ্যাকাউন্ট খোলার পর, সুদের টাকা সরাসরি সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা হয়। চাইলে ইমেইলের মাধ্যমে বা ডাকযোগে স্টেটমেন্টও পাওয়া যায়। অনেক ব্যাংক ২৪×৭ ফোন ব্যাংকিং সাপোর্টও দেয়, যা প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বড় সুবিধা।
কেন SCSS নির্বাচন করবেন?
অবসর জীবনে নিয়মিত আয়ের উৎস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। SCSS সেই চাহিদাই পূরণ করে। এখানে সুদ সরকার দ্বারা গ্যারান্টি করা, ফলে বাজারের ওঠাপড়ায় কোনো প্রভাব পড়ে না। এছাড়া প্রতি ত্রৈমাসিকে সুদের টাকা হাতে পাওয়ায় মাসিক খরচ সামলানোও সহজ হয়।
অন্যদিকে, দীর্ঘ মেয়াদি ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা অনেক সময় আটকে যায়, যা প্রবীণ নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা মুশকিল করে তোলে। SCSS-এ ৫ বছরের পরবর্তী পর্যায়ে চাইলে টাকা তুলতে পারা যায় এবং চাইলে মেয়াদও বাড়ানো যায়।
অর্থাৎ, যাঁরা অবসরের পর সুরক্ষিত ও নিশ্চিত আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা চান, তাঁদের জন্য SCSS একটি আদর্শ বিকল্প। এটি শুধু উচ্চ সুদই নয়, বরং কর সাশ্রয় এবং সরকারের সুরক্ষা একসঙ্গে প্রদান করে। ফলে, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম বর্তমানে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং মানসিক প্রশান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সর্বোপরি, অবসর জীবনে SCSS-এর মতো একটি প্রকল্প আর্থিক পরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত। এটি সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য এক দৃঢ় পদক্ষেপ।