জিএসটি (GST) কাঠামোতে বড়সড় পরিবর্তনের পথে কেন্দ্র সরকার। চলতি মাসের শেষভাগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ২০১৭ সালে চালু হওয়া কমপেনসেশন সেসের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে ২০২৬ সালের মার্চে। এর বদলে এবার নতুন কর ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র।
বিশেষ করে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সংক্রান্ত খরচ মেটানোর লক্ষ্যে নতুন ‘হেলথ অ্যান্ড এনার্জি সেস’ (Health and Energy Cess) আনার কথা ভাবা হচ্ছে। এই নতুন সেসের আওতায় মূলত তামাকজাত পণ্য, অ্যালকোহল এবং দামি গাড়ি পড়বে।
সূত্রের খবর, নতুন কর ব্যবস্থা চালু হলে সিগারেট, গুটখা, খৈনি, পানমসলা, এবং অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। একইভাবে বিলাসবহুল গাড়ি এবং অন্যান্য উচ্চমূল্যের অটোমোবাইলের দামও অনেকটা বেড়ে যাবে।
বর্তমানে এই সমস্ত পণ্য ‘সিন গুডস’ (Sin Goods) হিসাবে চিহ্নিত। এইসব পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় আগে থেকেই ২৮ শতাংশ জিএসটি স্ল্যাবের আওতায় রয়েছে। এর উপরে অতিরিক্ত কমপেনসেশন সেস আরোপ করা হয়।
কেন এই পরিবর্তন?
২০১৭ সালে জিএসটি চালুর সময় রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতিপূরণের জন্য কমপেনসেশন সেস চালু করা হয়েছিল। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এই সেস চালু করা হয়। পরে ২০২২ সালে তার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত করা হয়। এখন সেই মেয়াদও শেষের পথে।
ফলে কেন্দ্রের তরফে নতুন কর কাঠামো নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। তামাকজাত পণ্য ও বিলাসবহুল গাড়ির উপর নতুন ‘হেলথ অ্যান্ড এনার্জি সেস’ বসিয়ে অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজ্যগুলির পুরনো দেনা মেটানো এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত খরচে অর্থব্যবস্থা সুদৃঢ় করার লক্ষ্য রয়েছে।
শুধু তামাকজাত পণ্য বা গাড়ি নয়, কেন্দ্রের পরিকল্পনায় রয়েছে কয়লার উপর ‘ক্লিন এনার্জি সেস’ আরোপের কথাও। যা পরিবেশ দূষণ রোধের লক্ষ্য নিয়েই নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি অর্থমন্ত্রক সূত্রের। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই নতুন কর কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি বোঝা পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে যারা তামাকজাত পণ্য বা অ্যালকোহল নির্ভর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাদের ক্ষেত্রে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিলাসবহুল গাড়ির উপর নতুন কর চাপলে তাদের বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বর্তমানে কেন্দ্র সরকার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় ব্যস্ত। অর্থমন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, “জিএসটি কাউন্সিল এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজস্ব ঘাটতি পূরণ ও রাজ্যগুলির আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ আগামী দিনে দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।