পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (Sayan) একটি উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী করে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছেন। তিনি পরিষ্কারভাবে দাবি করেছেন যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ৩০টির বেশি আসন জিততে পারবে না।
তাঁর (Sayan) এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদি হোক বা নব্য, এই বাংলায় বিজেপির কোনও স্থান নেই।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “বিজেপির সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলই স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ফলাফল আরও খারাপ হবে।”
তিনি বিজেপির ২০১৯ ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা টেনে তাঁর যুক্তি উপস্থাপন করেন(Sayan)। তিনি বলেন, “২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল, এবং তারপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তারা ৭৭টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের আসন কমে ১২-তে দাঁড়িয়েছে। এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ২০২৬ সালে তাদের আসন আরও কমবে।”
সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sayan) এই দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। তিনি মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের জনগণের মধ্যে বিজেপির প্রতি আগ্রহ ক্রমশ কমছে। তিনি বলেন, “বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ওপর ভর করে বাংলায় পা রাখতে চেয়েছিল, তা এখানকার জনগণ গ্রহণ করেনি। বাংলার মানুষের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের সঙ্গে বিজেপির রাজনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিজেপির সংগঠন রাজ্যে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ২০২১ সালের পর থেকে তাদের দলীয় সংগঠনের ভাঙন এবং নেতৃত্বের ঘাটতি স্পষ্ট। অনেক নেতা দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন,(Sayan) যা বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা।”তিনি উল্লেখ করেন যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি আসন জিতে ৪৫.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যেখানে বিজেপি মাত্র ১২টি আসন জিতে ৩৮.৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
এই ভোটের ব্যবধান তৃণমূলের প্রতি জনগণের সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “বিজেপি যদি মনে করে যে তারা তৃণমূলের সঙ্গে ভোটের ব্যবধান কমিয়ে ফেলতে পারবে, তবে তা তাদের ভুল ধারণা। বাংলার জনগণ তৃণমূলের শাসনের প্রতি সন্তুষ্ট, এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তারা আস্থা রাখে।”
সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sayan) এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, “আমরা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৬০টিরও বেশি আসন জিততে আত্মবিশ্বাসী।
গত বিধানসভা নির্বাচনে আমরা ৬০টি আসনে অল্প ব্যবধানে হেরেছিলাম। এবার আমরা সেই আসনগুলো জিতে নেব।” তিনি আরও বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশাসন, এবং স্বজনপোষণের অভিযোগে জনগণ ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।”তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিজেপির জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩টি আসন জিতে সরকার গঠন করেছিল, এবং পরবর্তী উপনির্বাচনগুলিতে তাদের আসন সংখ্যা আরও বেড়ে ২১৬-তে পৌঁছেছে। বিপরীতে, বিজেপির আসন সংখ্যা কমে ৭৪-এ দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতৃত্বের ঘাটতি, এবং তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠন তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (Sayan) আরও বলেন, “বাংলার জনগণ ধর্মনিরপেক্ষতা ও প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী। বিজেপির বিভাজনমূলক রাজনীতি এখানে কাজ করবে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বামপন্থী দলগুলি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠন করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব। তবে বিজেপির জন্য এই লড়াই কঠিন হবে।”
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, সায়নের এই মন্তব্য বামপন্থীদের পক্ষ থেকে একটি রণকৌশলও হতে পারে। তারা বিজেপির দুর্বলতাকে তুলে ধরে জনগণের মধ্যে বার্তা দিতে চাইছে যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাম-কংগ্রেস জোটই একমাত্র বিকল্প।
গোলের ১২ গজ দূরের গল্প, আইএসএলের সেরা পেনাল্টি পারফর্মার তালিকায় দুই প্রধানের প্রাক্তন
তবে, তৃণমূলের তরফে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বিজেপি কি সত্যিই তাদের আসন সংখ্যা বাড়াতে পারবে, নাকি সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।