অয়ন দে, কোচবিহার: ‘নদীর (River) পাড়ে বাস, চিন্তা বারো মাস’— এই প্রবাদবাক্য যে কতটা বাস্তব, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের ছিট বড়লাউকুঠি গ্রামের চান্দেরমাটি এলাকার বাসিন্দারা। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সংকোশ এবং গঙ্গাধর নদীর জলস্ফীতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলস্বরূপ, ভয়াবহ আকারে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
বসতভিটে-আবাদি জমি সবই নদীগর্ভে
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত এক মাসের ভাঙনে ইতিমধ্যেই গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা নদীর (River) গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। অনেকের একমাত্র আবাদি জমি হারিয়ে রোজগারের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবু ছায়েদ শেখ, মুক্তার শেখ-সহ বহু কৃষিজীবী বাসিন্দা জানিয়েছেন, ভাঙনে দেড় থেকে দুই বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
মুক্তার শেখ বলেন, ‘‘এই নিয়ে তিনবার বাড়ি সরিয়েছি। দু’দিন আগেই বসতভিটে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন ত্রিপল টাঙিয়ে খোলা মাঠে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।’’
পানীয় জলের রিজার্ভারও বিপন্ন
ভানুকুমারী-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই অঞ্চল অসম সীমান্ত লাগোয়া। ইতিমধ্যেই সরকারি সোলার প্যানেল এবং নতুন বসানো পানীয় জলের রিজার্ভার নদীর মাত্র ১৫০ মিটার দূরে। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ধনঞ্জয় বর্মন জানিয়েছেন, ‘‘ভাঙন থামানো না গেলে কয়েক দিনের মধ্যেই সেটাও নদীর গর্ভে তলিয়ে যাবে।’’
দীর্ঘদিনের আন্দোলন, এখনও ভরসা নেই
স্থানীয় নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক ক্ষীরোদ রায় জানান, দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে সেচ দপ্তরের উদ্যোগে প্রায় ৮০০ মিটার বোল্ডারের বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বাঁধের বাইরের এলাকায় নতুন করে প্রবল ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
তুফানগঞ্জ মহকুমা সেচ দপ্তরের আধিকারিক সৌরভ সেন জানিয়েছেন, ‘‘ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন দফতরে জানানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’’ তবে গ্রামবাসীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শুধু পরিদর্শন আর আশ্বাস মিলছে, কার্যত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
গ্রামবাসীদের দুঃস্বপ্নের রাত
এই মুহূর্তে প্রায় ১৩০-১৫০টি পরিবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা বাড়িঘর কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। যাঁদের নেই, তাঁরা নদীর পাড়েই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। শিশু, বৃদ্ধ-সহ পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় দিন কাটছে।
নদীর তীব্র ভাঙন অব্যাহত। গ্রামবাসীরা চাইছেন, অবিলম্বে নতুন করে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক সেচ দপ্তর। নইলে গোটা চান্দেরমাটি গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা।