নিজের মৃত্যুর পরও ‘দলাই লামা’ প্রথা থামবে না-এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, এবং তাঁর পুনর্জন্ম চিহ্নিত করার একমাত্র অধিকার থাকবে গাদেন ফোদরাং ট্রাস্টের হাতে। এমনই এক দৃঢ় বার্তা দিলেন ১৪তম দলাই লামা, তাঁর ৯০তম জন্মদিনের প্রাক্কালে।
এই ঘোষণা শুধু তাঁর অনুগামী তিব্বতিদের জন্যই নয়, বরং স্পষ্টতই চীনের উদ্দেশে ছোড়া একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ, যেখানে তিনি জানিয়ে দিলেন, বেজিংয়ের কোনও ধরনের ‘অনুমোদন’ তাঁর পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ায় প্রযোজ্য নয়।
“আমার অফিসই ঠিক করবে”
বুধবার প্রকাশিত অফিসিয়াল বিবৃতিতে দলাই লামা বলেন, “ভবিষ্যতের দলাই লামা কে হবেন, তা নির্ধারণের অধিকার একমাত্র গাদেন ফোদরাং ট্রাস্টের। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাঁরা পরামর্শ নেবেন তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন শাখার প্রধানদের এবং সেই ধর্মীয় রক্ষকদের যাঁরা ঐতিহ্যগতভাবে দলাই লামা প্রথার সঙ্গে যুক্ত।”
তিনি অতিরিক্তভাবে স্পষ্ট করেন, ২০১১ সালে তাঁর দেওয়া একটি ঘোষণাতেই এই নীতিগত অবস্থান স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছিল, আর এখন সেই অবস্থানকে আবারও দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করা হল।
চীনের প্রতিক্রিয়া: “আমরাই ঠিক করব” dalai lama reincarnation
দলাই লামার বক্তব্যের জবাবে চীন যথারীতি তাদের অবস্থান থেকে সরেনি। বেজিংয়ের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, “দলাই লামার উত্তরসূরির নির্বাচন হতে হবে চীনের আইন, ধর্মীয় রীতি ও ঐতিহাসিক প্রথা মেনেই, এবং তা ঘটতে হবে চীনের ভূখণ্ডে।” বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রশ্ন নয়, তিব্বতের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ঘিরে এক দীর্ঘদিনের সংঘর্ষ।
ধর্মশালা থেকে বৈশ্বিক বার্তা
দলাই লামা ১৯৫৯ সালে তিব্বতে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ গণবিদ্রোহের পর ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি উত্তর ভারতের ধর্মশালায় বসবাস করছেন এবং সেখান থেকেই তিব্বতিরা তাঁদের স্বশাসন, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরিচয় ধরে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
যেখানে বেজিং তাঁকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যা দেয়, সেখানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ তাঁকে দেখেন অহিংসা, সহনশীলতা ও আত্মপরিচয়ের অবিচল প্রতীক হিসেবে।
পুনর্জন্ম নিয়ে আন্তর্জাতিক নজর
তাঁর বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। ফলে দলাই লামার উত্তরাধিকার ইস্যুটি শুধু ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রশ্ন নয়—তা এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর সাম্প্রতিক ঘোষণাটি নিঃসন্দেহে চীনের তীব্র আপত্তির মুখেও তিব্বতি ঐতিহ্য রক্ষার দৃঢ় সংকল্পের প্রতিফলন। এখন নজর এই ঘোষণার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও বেজিং কীভাবে মোকাবিলা করে তার দিকেই।