বর্তমান সময়ে ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ফিফা (FIFA) র্যাঙ্কিংয়ে পতন, মাঠে হতাশাজনক ফলাফল এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার সভাপতি (AIFF) কল্যাণ চৌবে (Kalyan Chaubey) এক নতুন পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখছেন। স্পোর্টস্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, যুব উন্নয়ন এবং আইএসএলের চ্যালেঞ্জ।
ফিফা র্যাঙ্কিং উন্নতির কৌশল
ভারতের ফিফা র্যাঙ্কিং উন্নত করতে হলে জাতীয় দলকে ম্যাচ জিততে হবে, আর তার জন্য গোল করা জরুরি। গত ১৬টি ম্যাচে সিনিয়র পুরুষ দল মাত্র একটি জয় পেয়েছে (মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০) এবং মোট সাতটি গোল করেছে। ফেডারেশনের ভূমিকা হল সুযোগ তৈরি করা, কৌশল তৈরি করা এবং ফিফা উইন্ডোতে জাতীয় দলের খেলা নিশ্চিত করা। প্রধান কোচের পরামর্শে প্রশিক্ষণ শিবির, সেশন এবং প্রতিপক্ষ নির্বাচন করা হয়। তবে, মাঠে সাফল্যের জন্য খেলোয়াড়দেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
ভারতের বয়সভিত্তিক দল ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ কিংবা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে, এমনকি মহাদেশীয় টুর্নামেন্টেও জায়গা করে নিতে পারেনি। সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেন , যুব উন্নয়নের কাজ শুরু হওয়া উচিত ১১ বছরের কম বয়স থেকে। এই সময়ে খেলোয়াড়দের প্রাথমিক কৌশল শেখানো দরকার। ১২-১৩ বছরে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি, ১৪-১৫ বছরে নিয়মিত ম্যাচ খেলা, ১৬-১৭ বছরে উচ্চ-কার্যক্ষমতার প্রশিক্ষণ, এবং ১৮-২০ বছরে পেশাদার স্তরে রূপান্তর—এই ধাপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আজ যারা খেলছে, ১০ বছর আগে তাদের জন্য কি কাঠামোগত যুব উন্নয়ন ব্যবস্থা ছিল? যদি না থাকে, তবে আজকের তরুণদের জন্য আমাদের এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে।”
ফুটবল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (FSDL) আইএসএলে পদোন্নতি ও অবনমনের উপর ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছে, যা ২০১৯ সালে এএফসি-র সঙ্গে স্বাক্ষরিত রোডম্যাপের বিরুদ্ধে যায়। ফেডারেশন এই প্রস্তাবের জবাবে একটি পাল্টা প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তবে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় চৌবে এই নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারেননি। এছাড়া, আইএসএলের শুরু ও শেষের তারিখ এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় এটি এআইএফএফ-এর ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
ওসিআই খেলোয়াড়দের অন্তর্ভুক্তি
প্রবাসী ভারতীয় (পিআইও) এবং ওভারসিজ সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া (OCI) কার্ডধারীদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি জটিল। ভারত দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকার না করলেও, এই কার্ডধারীদের ভারতের সঙ্গে পারিবারিক বা ঐতিহাসিক সংযোগ থাকে, যা ক্রীড়া যোগ্যতার ক্ষেত্রে বিবেচনাযোগ্য। ফিফা নিয়ম, ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় ক্রীড়া নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে ফিফা ও ভারত সরকারের কাছ থেকে স্পষ্টতা না পাওয়া পর্যন্ত ৩৩ জন খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ (আইডব্লিউএল) ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আইডব্লিউএল-২ চালু হয়েছে এবং অস্মিতার মতো উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিভার ভাণ্ডার বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এআইএফএফের উদ্দেশ্য মহিলা ফুটবলের ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করা। আইএসএলে অনেক খেলোয়াড় উচ্চ বেতন পেলেও জাতীয় দলে তাদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। তবে, খেলোয়াড়দের বেতন ক্লাব ও ব্যক্তির মধ্যে চুক্তির বিষয় এবং এআইএফএফ এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলেই জানিয়েছেন কল্যাণ চৌবে।
অনেক রাজ্যে কাঠামোগত লিগের অভাব এবং দলাদলি ও আইনি মামলার কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাজ্য পর্যায়ে স্পনসরশিপের অভাব দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এআইএফএফ রাজ্য সংগঠনগুলোকে তাদের নিজস্ব সংবিধানের অধীনে কাজ করতে উৎসাহিত করছে, তবে মামলা এবং দলাদলি বড় বাধা।
২০৩১ এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য বিড
কল্যাণ চৌবে’র শুরুর লক্ষ্য ছিল গ্রাসরুট উন্নয়ন, কিন্তু ২০৩১ এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য বিড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলছেন, দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত, তবে গ্রাসরুট, আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, কোচিং এবং কাঠামোগত সহায়তা একসঙ্গে এগোতে হবে। ২০২৭ সালের বিড প্রত্যাহার করা হয়েছিল অবকাঠামোগত দেরি, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রস্তুতির অভাবের কারণে। ২০৩১-এর জন্য ভালো প্রস্তুতির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।