কলকাতা: কসবা আইন কলেজের (Kasba Law College) গণধর্ষণ কাণ্ডে এবার তদন্তে নামল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Calcutta)। বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সদস্যের এক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম সরাসরি কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছে যান। তাঁরা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায়ের (Nayna Chatterjee) সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ইউনিয়ন রুম খোলা থাকা, কলেজের (Kasba Law College) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং পঠনপাঠন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিনের বৈঠকে মূলত কলেজের প্রশাসনিক কার্যকারিতা, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা এবং ঘটনার পর কলেজ কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েছে, সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে।
দুই দিন আগেই কলেজের (Kasba Law College) পড়ুয়ারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে ভাইস প্রিন্সিপালকে ডেপুটেশন দিতে চেয়েছিলেন। এরপর বুধবার কলেজের গভর্নিং বডির বৈঠক (GB Meeting) অনুষ্ঠিত হয়। আজ বৃহস্পতিবার অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদেরও কলেজে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এদিকে, পুলিশ তদন্তেও এসেছে নতুন মোড়। মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র সহ অন্যান্য ধৃতদের বিরুদ্ধে নতুন করে অপহরণসহ মোট ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মেডিক্যাল রিপোর্টে অভিযুক্ত মনোজিতের শরীরে আঁচড়ের দাগ পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে নির্যাতিতা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন।
তবে মনোজিতের আইনজীবী এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘আমার মক্কেলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। শরীরে যে দাগ পাওয়া গেছে তা লাভ বাইট (Love Bite)। ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত না করে এইভাবে অভিযুক্তকে দোষী বলা অন্যায়।’’
পুলিশের পক্ষ থেকে যদিও স্পষ্ট জানানো হয়েছে, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে এবং মেডিক্যাল রিপোর্টের তথ্য মিলিয়ে নতুন ধারাগুলি সংযোজন করা হয়েছে।
বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মূল অভিযুক্তের রাজনৈতিক যোগাযোগ, কলেজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অভাব এবং প্রশাসনিক গাফিলতি— সব দিক থেকেই তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, ফরেনসিক রিপোর্ট এবং অভিযুক্তদের কল ডেটা বিশ্লেষণও শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের এক সদস্য বলেন, ‘‘কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদন তৈরির পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দেওয়া হবে।’’
অন্যদিকে রাজ্য জুড়ে ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলিও কসবা কাণ্ডে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে।
রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় একটি কলেজে নিরাপত্তার এত বড় ফাঁক কীভাবে থেকে গেল? প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগও উঠছে প্রবলভাবে।
বর্তমানে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) কসবা কাণ্ডের তদন্তে নেমেছে। অভিযুক্তদের জামিনের আর্জি খারিজ করেছে আদালত।
এই ঘটনার পর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তারা চাইছেন, অবিলম্বে কলেজ ক্যাম্পাসে সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়ানো হোক।
কসবা আইন কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে তদন্তের গতি কোন দিকে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে কী উঠে আসে— সেদিকেই নজর এখন সকলের।