সোনারপুর: সোমবার রাতে দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার সকালে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ক্যানিং শাখা। এদিন সকালে সোনারপুরের রাধাগোবিন্দ পল্লী এলাকায় রেল (Rail) লাইনের উপর নেমে এসে অবরোধে সামিল হলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের একটাই দাবি— অবিলম্বে ওই এলাকায় স্থায়ী লেভেল ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ওই রাস্তায় প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তারা রেলের (Rail) কাছে লেভেল ক্রসিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ফাঁকা জায়গা পারাপারের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। সোমবার রাতের দুর্ঘটনার পর ক্ষোভ আরও বাড়ে। আর সেই কারণেই আজ সকালে তারা রেল অবরোধের পথে হাঁটেন।
এদিন সকাল থেকে অবরোধের জেরে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকে পড়ে। সোনারপুর-ক্যানিং শাখার বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নিত্যযাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। কাজের দিনে অফিসযাত্রী থেকে পড়ুয়া— সকলেই অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়েন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ‘‘প্রতিদিন রিস্ক নিয়ে রেললাইন পার হতে হয়। একটু অসাবধান হলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সোমবার রাতের দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এখানকার পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক। তাই স্থায়ী লেভেল ক্রসিং চাই।’’
অবরোধকারীরা আরও বলেন, ‘‘আমরা বারবার রেলের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে রেল অবরোধ করেছি। যতদিন না দাবি মানা হচ্ছে, ততদিন অবরোধ চলবে।’’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে রেল পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হয়। রেলের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পাঠানো হবে।
রেল দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় সেফটি অডিটের কাজ শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই একটি বিকল্প ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে স্থায়ী লেভেল ক্রসিং স্থাপন করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য তাতে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের সাফ কথা, ‘‘কথার আশ্বাসে আর বিশ্বাস নেই। কাজ শুরু না হলে অবরোধ চলতেই থাকবে।’’
এই ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা সংলগ্ন এলাকাগুলিতে রেললাইন পারাপারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্টেশনে এই ধরনের সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু রেলের তরফে এখনও পর্যন্ত বড় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রেল অবরোধের জেরে অফিস টাইমে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সকাল থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে রেল প্রশাসন।
বর্তমানে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে প্রস্তুত।