৮ম বেতন কমিশনের পর মহার্ঘ ভাতা দ্বিগুণ হবে না কমবে?

কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance বা DA) একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক উপাদান। এটি মূল বেতনের শতাংশ হিসেবে গণনা করা হয় এবং…

8th Pay Commission: Will Dearness Allowance Double or Drop for Central Govt Employees?

কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা (Dearness Allowance বা DA) একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক উপাদান। এটি মূল বেতনের শতাংশ হিসেবে গণনা করা হয় এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। সম্প্রতি ৮ম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের ঘোষণার পর থেকে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে মহার্ঘ ভাতা দ্বিগুণ হবে, নাকি কমে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেছি।

২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ৮ম বেতন কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এই কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের বেতন ও ভাতার কাঠামো পর্যালোচনা করবে। বর্তমানে ৭ম বেতন কমিশনের অধীনে মহার্ঘ ভাতা ৫৫% হারে প্রদান করা হচ্ছে, যা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর। তবে, নতুন কমিশনের সুপারিশের পর এই ভাতার হার কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।

   

মহার্ঘ ভাতা কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মহার্ঘ ভাতা হলো এমন একটি ভাতা, যা সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের মূল বেতন বা পেনশনের শতাংশ হিসেবে প্রদান করা হয়। এটি মূলত মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলা করতে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখতে দেওয়া হয়। মহার্ঘ ভাতা প্রতি ছয় মাসে (জানুয়ারি ও জুলাই) অল-ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI-IW) এর ভিত্তিতে সংশোধন করা হয়। বর্তমানে এই ভাতা সম্পূর্ণ করযোগ্য এবং এটি বেতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৮ম বেতন কমিশনের প্রেক্ষিতে মহার্ঘ ভাতা
৮ম বেতন কমিশনের ঘোষণার পর থেকে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে দুটি প্রধান প্রশ্ন উঠেছে: এটি কি মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হবে, নাকি নতুন কাঠামোতে এর হার কমে যাবে? ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, যখন মহার্ঘ ভাতা ৫০% ছাড়িয়ে যায়, তখন এটি মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করার দাবি ওঠে। ৫ম বেতন কমিশনের সময় এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছিল, যেখানে ৫০% মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। তবে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম বেতন কমিশনে এই একীভূতকরণ ঘটেনি। ফলে, কর্মচারী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ৮ম বেতন কমিশন মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত করে, তবে এটি কর্মচারীদের বেতন এবং পেনশনভোগীদের পেনশনে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি মূল বেতন ৪০,০০০ টাকা হয় এবং ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫ ধরা হয়, তবে নতুন মূল বেতন হবে ১,০০,০০০ টাকা। এই ক্ষেত্রে মহার্ঘ ভাতা প্রাথমিকভাবে শূন্য হতে পারে, তবে পরবর্তী সময়ে মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে এটি আবার বাড়বে। এই পদক্ষেপ বেতন কাঠামোকে আরও সরল করতে পারে এবং অন্যান্য ভাতা যেমন হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (HRA) এবং গ্র্যাচুইটির পরিমাণ বাড়াতে পারে।

মহার্ঘ ভাতা কমার সম্ভাবনা
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অল-ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI-IW) ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ০.৫ পয়েন্ট কমে ১৪৩.২-এ দাঁড়িয়েছে। এই হ্রাস মহার্ঘ ভাতার প্রত্যাশিত ২% বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। যদি মূল্যস্ফীতির হার কমতে থাকে, তবে সরকার মহার্ঘ ভাতার হার সংশোধন করে কমাতে পারে। এটি কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে, কারণ বর্তমানে ৫৫% হারে প্রদত্ত মহার্ঘ ভাতা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Advertisements

কর্মচারীদের প্রত্যাশা
কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের সংগঠনগুলো ৮ম বেতন কমিশনের কাছে ৩.০ থেকে ৩.৫ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের দাবি জানিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ন্যূনতম মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫১,৪৮০ টাকা হতে পারে। এই বৃদ্ধি মহার্ঘ ভাতা এবং অন্যান্য ভাতার পরিমাণেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে, মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত না হলে এবং মূল্যস্ফীতির হার কম থাকলে, ভাতার পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

অর্থনৈতিক প্রভাব
মহার্ঘ ভাতার পরিবর্তন শুধু কর্মচারীদের বেতনের উপরই প্রভাব ফেলবে না, বরং সরকারের বাজেট এবং অর্থনীতির উপরও এর প্রভাব পড়বে। মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি বা একীভূতকরণের ফলে সরকারের বার্ষিক ব্যয় বাড়বে, যা প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীদের জন্য উল্লেখযোগ্য। তবে, এই বৃদ্ধি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ কর্মচারীদের হাতে বাড়তি আয় ব্যয় বাড়াবে, যা ভোগ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে সরকারকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। মহার্ঘ ভাতা একীভূতকরণ বা হ্রাসের সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতির হার এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। যদি মূল্যস্ফীতি কম থাকে, তবে মহার্ঘ ভাতা কমার সম্ভাবনা থাকলেও, কর্মচারী সংগঠনগুলোর চাপ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকার এই ভাতা বাড়ানোর দিকে ঝুঁকতে পারে।

৮ম বেতন কমিশনের সুপারিশের উপর নির্ভর করে মহার্ঘ ভাতা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে মূল বেতনের সঙ্গে একীভূত হলে এটি বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির হার কম থাকলে ভাতার পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, এর আগে সরকারের স্পষ্ট ঘোষণা এবং রোডম্যাপ প্রয়োজন।