১০ জুলাই পর্যন্ত অভিযুক্তদের হেফাজতে রাখার আবেদন কলকাতা পুলিশের

সাউথ কলকাতা ল কলেজে ঘটে যাওয়া অভিযুক্ত গণধর্ষণ মামলায় তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) প্রধান প্রসিকিউটর সৌরিন ঘোষাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, “মেডিক্যাল প্রমাণ,…

Kolkata Police requested for police custody

সাউথ কলকাতা ল কলেজে ঘটে যাওয়া অভিযুক্ত গণধর্ষণ মামলায় তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) প্রধান প্রসিকিউটর সৌরিন ঘোষাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন, “মেডিক্যাল প্রমাণ, পরিস্থিতিগত প্রমাণ এবং ইলেকট্রনিক প্রমাণ ছাড়াও, গত চার দিনের পুলিশ হেফাজতের সময় ভুক্তভোগীর বিবৃতি সংগ্রহ করা হয়েছে।

আমরা অভিযুক্তদের ১০ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের জন্য (Kolkata Police) আবেদন করেছি, এবং আদালত আমাদের আবেদন বিবেচনা করছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে।” এই মামলায় চারজন অভিযুক্ত—মনোজিৎ মিশ্র, জায়েব আহমেদ, প্রমিত মুখোপাধ্যায় এবং নিরাপত্তারক্ষী পিনাকি ব্যানার্জি—বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

   

এই ঘটনা (Kolkata Police) রাজ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক এবং জনরোষের জন্ম দিয়েছে।ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ জুন, সাউথ কলকাতা ল কলেজের ভিতরে যেখানে একজন ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীর অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র, যিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা এবং কলেজের অস্থায়ী কর্মী, তাঁর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর তাঁকে জোর করে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে মনোজিৎ মিশ্র তাঁকে ধর্ষণ করেন, এবং অপর দুই অভিযুক্ত জায়েব আহমেদ এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় দরজায় পাহারা দেন। ভুক্তভোগী আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন এবং তাঁকে ভয় দেখিয়ে বলেন, অভিযোগ করলে এই ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়া হবে। তিনি অভিযোগে বলেন, “আমি তাঁর পায়ে ধরে ছেড়ে দেওয়ার অনুর গ্রহ করেছিলাম, কিন্তু তিনি ছাড়েননি।”

কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) এই ঘটনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ২৬ জুন সন্ধ্যায় মনোজিৎ মিশ্র এবং জায়েব আহমেদকে তালবাগান ক্রসিং থেকে গ্রেফতার করা হয়, এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায়কে মধ্যরাতে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে, ২৮ জুন নিরাপত্তারক্ষী পিনাকি ব্যানার্জিকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও কোনও সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ।

অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে, এবং একটি ১.৫ মিনিটের ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে, যা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে, এই ভিডিও অন্য কোথাও শেয়ার করা হয়েছে কিনা।মেডিক্যাল পরীক্ষায় ভুক্তভোগীর শরীরে জোরপূর্বক প্রবেশ, কামড়ের দাগ এবং নখের আঁচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা তাঁর অভিযোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীকে জোর করে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং তিন অভিযুক্ত ও নিরাপত্তারক্ষীর গতিবিধি স্পষ্ট। সৌরিন ঘোষাল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, গণধর্ষণ মামলায় গ্রুপের সবাই দায়ী, এমনকি যদি সবাই সরাসরি ধর্ষণ না করে। এই ক্ষেত্রে, দুইজন সহায়তা করেছেন, তাই এটি গণধর্ষণের মামলা।”

পুলিশ (Kolkata Police) পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে, যার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন এসিপি প্রদীপ কুমার ঘোষাল। এসআইটি জানিয়েছে, অভিযুক্তরা এই ধরনের অপরাধের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করেছিল এবং কলেজের অন্যান্য ছাত্রীদেরও যৌন হয়রানির শিকার করেছিল। তদন্তে দেখা গেছে, মনোজিৎ মিশ্র কলেজে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য পরিচিত ছিলেন। পুলিশ ২৫ জুন সন্ধ্যায় কলেজে উপস্থিত ২৫ জনের তালিকা তৈরি করেছে, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Advertisements

এই মামলা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করেছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, তৃণমূল সরকার অভিযুক্তদের আশ্রয় দিচ্ছে, এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করেছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “মমতা ব্যানার্জির শাসনে পশ্চিমবঙ্গ নারীদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে।”

তৃণমূল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা ভুক্তভোগীর পাশে রয়েছে এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তৃণমূল নেতা শশী পাঁজা বলেন, “আমরা অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছি না। ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিত সংজ্ঞান নিয়েছে এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে তিনটি এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যেখানে বিচারিক হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা (Kolkata Police) এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। শুক্রবার কসবা থানার সামনে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই-এর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়, যেখানে বেশ কয়েকজন আহত হন। সাউথ কলকাতা ল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস স্থগিত করেছে।

“কসবা প্রসঙ্গে কিছু বলিনি, সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্ত করছে”, মানস ভুঁইয়া

এই ঘটনা ২০২৪ সালের আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ-হত্যা মামলার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যা রাজ্যে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল। ভুক্তভোগীর পরিবার এবং স্থানীয়রা নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, এবং আগামী দিনে এই মামলার ফলাফল রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।