কলকাতা: কসবা আইন কলেজে সাম্প্রতিক গণধর্ষণ (Kasba Incident) কাণ্ডের পর এবার কড়া পদক্ষেপ যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের ছাত্র সংসদের। কলেজ ক্যাম্পাসে প্রাক্তন ছাত্রদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বড়সড় নিষেধাজ্ঞা জারি করল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছর কোনও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী কলেজের ছাত্র সংসদের কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। পাশ করার পর থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাঁদের কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোও যাবে না। মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১ জুলাই ২০২৫ থেকে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।
তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কলেজের ঐতিহ্যবাহী সরস্বতী পুজো, প্রাক্তনীদের জন্য আয়োজিত ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচে প্রবেশের অনুমতি মিলবে। এছাড়া যেসব প্রাক্তনী ইউপিএসসি বা সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করবেন বা সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগপত্র পাবেন, তাঁরাও বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন।
ছাত্র সংসদের তরফ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, ‘‘পাশ আউটের পরের পাঁচ বছর কলেজের ছাত্র সংসদের কোনও অনুষ্ঠান বা প্রোগ্রামে প্রাক্তনরা অংশ নিতে পারবেন না। তাঁদের আমন্ত্রণ জানানোও যাবে না।’’
উল্লেখ্য, গত বছর সরস্বতী পুজোর সময় কলেজ চত্বরে একাধিক অশান্তির ঘটনার পর কলকাতা হাই কোর্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রাক্তনদের প্রবেশাধিকার নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশনার ভিত্তিতেই কলেজ প্রশাসন এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে কসবা আইন কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতার নাম সামনে আসার পর এই নির্দেশিকাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে শিক্ষা মহল। কলেজের বর্তমান ছাত্ররা মনে করছেন, প্রাক্তন ছাত্রদের লাগামছাড়া উপস্থিতি এবং বারবার ক্যাম্পাসে অশান্তির জেরে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ছাত্র সংসদ।
এই প্রসঙ্গে কলেজের এক বর্তমান ছাত্র বলেন, ‘‘প্রাক্তনীদের লাগাতার ক্যাম্পাসে আসা এবং বারবার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিল। কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছিল। তাই ছাত্র সংসদের এই সিদ্ধান্ত খুবই সময়োপযোগী।’’
কলেজ প্রশাসন সূত্রে খবর, ভবিষ্যতে এই নির্দেশিকা আরও কঠোর করা হতে পারে, যদি ফের কোনও বড় ঘটনা ঘটে। বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা চাইছেন, পড়াশোনা এবং সুস্থ ক্যাম্পাস পরিবেশ বজায় রাখতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকুক।
অন্যদিকে, কিছু প্রাক্তনী এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, সবাইকে এক ছাঁচে ফেলা ঠিক নয়। অনেকেই কলেজের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন, তাঁদেরও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ফেলা হচ্ছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতে নির্দেশিকায় সংশোধন আনা হতে পারে।
এই মুহূর্তে কসবা আইন কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রাক্তন কলেজের এই কড়া সিদ্ধান্ত রাজ্য রাজনীতিতেও বেশ তাৎপর্য তৈরি করেছে।