কার্তিক মহারাজের শাস্তির দাবিতে হাতে ঝাঁটা নিয়ে পথে নামল নবগ্রামের মহিলারা

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে পদ্মশ্রী সম্মানিত ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ, (Kartik-Maharaj) যিনি কার্তিক মহারাজ নামে পরিচিত, তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ব্ল্যাকমেল এবং জোরপূর্বক গর্ভপাতের অভিযোগে তীব্র…

protest against Kartik-Maharaj in nabagram

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে পদ্মশ্রী সম্মানিত ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ, (Kartik-Maharaj) যিনি কার্তিক মহারাজ নামে পরিচিত, তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ব্ল্যাকমেল এবং জোরপূর্বক গর্ভপাতের অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদে পথে নেমেছেন স্থানীয় মহিলারা। নবগ্রামের রাস্তায় ঝাঁটা হাতে মহিলারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন, কার্তিক মহারাজের গ্রেফতারি ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে।

এই ঘটনায় ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) নীরবতা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) অভিযোগ করেছে যে, বিজেপি তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কার্তিক মহারাজকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তবে, স্থানীয়রা এবং অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, এই মামলার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই, এবং তারা নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচার চান।

   

অভিযোগকারিণী মহিলা গত সপ্তাহে নবগ্রাম থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কার্তিক মহারাজ (Kartik-Maharaj) তাঁকে চানক আদিবাসী আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে তাঁকে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে স্কুলের হোস্টেলের পঞ্চম তলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, কার্তিক মহারাজ (Kartik-Maharaj) ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত ১২ বার তাঁকে ধর্ষণ করেন। এছাড়া, তিনি গর্ভবতী হলে তাঁকে বহরমপুরের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়। অভিযোগকারিণী আরও জানিয়েছেন, কার্তিক মহারাজ তাঁকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।

২০২৫ সালের ১২ জুন কার্তিক(Kartik-Maharaj) মহারাজ তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করে ১৩ জুন বহরমপুর সংশোধনাগারের কাছে দেখা করতে বলেন। অভিযোগকারিণী জানান, সেখানে কার্তিক মহারাজের দুই সহযোগী তাঁকে গাড়িতে তুলে হুমকি দেন এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে বলে মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান। এই ঘটনার পর তিনি নবগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন এবং হুমকির ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

নবগ্রাম থানার পুলিশ সোমবার (৩০ জুন) ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মুর্শিদাবাদ ইউনিটে কার্তিক মহারাজের কাছে একটি নোটিশ পাঠায়, তাঁকে মঙ্গলবার (১ জুলাই) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে। তবে, কার্তিক মহারাজ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, এবং নোটিশটি আশ্রমের একজন প্রতিনিধির হাতে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার, কার্তিক মহারাজের (Kartik-Maharaj) আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চে এফআইআর বাতিলের আবেদন জানান, দাবি করে যে ১৩ বছর আগের ঘটনার ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

এই ঘটনা রাজ্যে রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। (Kartik-Maharaj) তৃণমূল কংগ্রেস এক্স-এ পোস্ট করে বলেছে, “বিজেপির ঘনিষ্ঠ মিত্র কার্তিক মহারাজ, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুপারিশে পদ্মশ্রী পেয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।” টিএমসি নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের ঘটনায় আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি, কিন্তু কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে বিজেপির নীরবতা কেন?”

Advertisements

বিজেপির বহরমপুর ইউনিটের প্রধান মলয় মহাজন এই অভিযোগকে তৃণমূলের “নোংরা রাজনীতি” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, দাবি করে যে এটি কার্তিক মহারাজকে বদনাম করার চক্রান্ত(Kartik-Maharaj)। তিনি বলেন, “১৩ বছর পর এই অভিযোগ কেন? এটি তৃণমূলের কাশবা ল কলেজ কাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর কৌশল।” বিজেপি নেতারা আরও জানিয়েছেন, এই অভিযোগের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

অভিযোগকারিণী একটি সংবাদমাধ্যমে বলেন, “আমি নিজের ইচ্ছায় অভিযোগ দায়ের করেছি, কেউ আমাকে বাধ্য করেনি। আমি কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চাই।” তিনি জানান, ভয় এবং মানসিক চাপের কারণে তিনি এত বছর নীরব ছিলেন।

নবগ্রামের মহিলারা মঙ্গলবার ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করে কার্তিক মহারাজের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মিনতি মণ্ডল বলেন, “আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।” তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে, “ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপির কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে নবগ্রামবাসীদের প্রতিবাদ মিছিল।

Dilip Ghosh: বাম নেতাকে জুতোপেটা, ক্ষুব্ধ রাম নেতা দিলীপ ঘোষ বললেন সুর্পনখার হামলা!

বিজেপির মুখে কুলুপ কেন? জনগণ জবাব চায়।”এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজের গণধর্ষণ মামলার প্রেক্ষাপটে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। বিজেপি তৃণমূলকে ধর্ষকদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করলেও, তৃণমূল কার্তিক মহারাজের মামলায় বিজেপির নীরবতাকে ধর্ষকদের পক্ষ নেওয়ার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে।

পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সাক্ষীদের বয়ান রেকর্ড করা হবে। এই মামলার ফলাফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।