বলিউডের প্রতিভাবান অভিনেত্রী কৃতি স্যানন (Kriti Sanon) তার আসন্ন নেটফ্লিক্স থ্রিলার ‘দো পত্তি’তে একটি রহস্যময় এবং চমকপ্রদ দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করছেন। ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি দর্শকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কৃতি এই ছবিতে প্রথমবারের মতো দুটি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তার অভিনয় দক্ষতার পরিসরকে আরও প্রকাশ করছে। এই ছবিতে তার সঙ্গে রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল এবং টেলিভিশন তারকা শাহির শেখ। কৃতির এই দ্বৈত ভূমিকা এবং ছবির রহস্যময় গল্প দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়েছে। ‘দো পত্তি’ শুধুমাত্র একটি থ্রিলার নয়, এটি কৃতির প্রযোজক হিসেবে প্রথম প্রকল্প, যা তাকে এবং তার প্রযোজনা সংস্থা ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মসকে নতুন আলোয় তুলে ধরছে।
‘দো পত্তি’র গল্প ও কৃতির ভূমিকা
‘দো পত্তি’ একটি রহস্যময় থ্রিলার, যা উত্তরাখণ্ডের কাল্পনিক শহর দেবীপুরের পাহাড়ি পটভূমিতে সেট করা হয়েছে। ছবিটির গল্প কেন্দ্রীভূত দুই যমজ বোন, সৌম্যা এবং শৈলী, যাদের ভূমিকায় অভিনয় করছেন কৃতি স্যানন। এই দুই বোনের চরিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। সৌম্যা একজন সরল, ভালোবাসায় বিশ্বাসী এবং উদ্বিগ্ন মেয়ে, যিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জীবনযাপন করেন। অন্যদিকে, শৈলী একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং উচ্চাভিলাষী চরিত্র, যিনি তার বোনের জীবনকে ধ্বংস করতে চান। এই দুই চরিত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং তাদের গোপনীয়তা গল্পটিকে একটি রোমাঞ্চকর মোড় দেয়। ছবির ট্রেলারে দেখা গেছে, কৃতির চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি তীব্র প্রেম এবং বিশ্বাসঘাতকতার জালে জড়িয়ে পড়ে, যা গল্পটিকে আরও জটিল করে তোলে।
কাজল এই ছবিতে প্রথমবারের মতো একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর, বিদ্যা জ্যোতির ভূমিকায় অভিনয় করছেন। তিনি একটি খুনের চেষ্টার মামলার তদন্তে নেমে সৌম্যা, শৈলী এবং তাদের স্বামী ধ্রুব সুদের (শাহির শেখ) জীবনের গোপন রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করেন। গল্পটি সত্য-মিথ্যার জটিল জালে আবদ্ধ, যেখানে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা এবং প্রতিশোধের মতো থিমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শশাঙ্ক চতুর্বেদী, এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন কনিকা ধিল্লন, যিনি কৃতির সঙ্গে এই প্রকল্পের সহ-প্রযোজকও।
কৃতির দ্বৈত ভূমিকার আকর্ষণ
কৃতি স্যাননের এই দ্বৈত ভূমিকা তার অভিনয় ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি এর আগে ‘মিমি’ (২০২১) ছবিতে তার অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। ‘দো পত্তি’তে তিনি দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রে অভিনয় করে তার বহুমুখী প্রতিভা প্রমাণ করেছেন। সৌম্যার চরিত্রে তিনি একজন দুর্বল, আবেগপ্রবণ এবং মানসিকভাবে ভঙ্গুর নারী হিসেবে দর্শকদের সামনে এসেছেন, যিনি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার স withে লড়াই করেন। অন্যদিকে, শৈলী হিসেবে তিনি একজন তীক্ষ্ণ, প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং আকর্ষণীয় নারী, যিনি তার লক্ষ্য অর্জনে যেকোনো সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। সমালোচকরা কৃতির এই পারফরম্যান্সকে ‘মিমি’র পর তার ক্যারিয়ারের সেরা কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কনিকা ধিল্লন বলেছেন, “কৃতি এই ছবিতে তার অভিনয়কে একটি নতুন স্তরে নিয়ে গেছেন। তিনি দর্শকদের অবাক করে দেবেন।”
এক্স-এ পোস্ট করা ভক্তদের প্রতিক্রিয়া থেকে জানা যায়, কৃতির এই দ্বৈত ভূমিকা দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন ভক্ত লিখেছেন, “কৃতি স্যানন দো পত্তিতে তার বহুমুখী অভিনয় দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। সৌম্যা এবং শৈলীর চরিত্রে তিনি অসাধারণ!” আরেকজন লিখেছেন, “এটি একটি সাসপেন্সফুল থ্রিলার, যেখানে কৃতির পারফরম্যান্স চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।”
কৃতির প্রযোজক হিসেবে অভিষেক
‘দো পত্তি’ কৃতি স্যাননের প্রযোজক হিসেবে প্রথম প্রকল্প। তার প্রযোজনা সংস্থা ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মস এবং কনিকা ধিল্লনের কথা পিকচার্সের সহযোগিতায় এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। কৃতি বলেছেন, “এই ছবিটি আমার হৃদয়ের খুব কাছের। আমি সবসময় চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিটি দিকে সৃজনশীলভাবে জড়িত থাকতে চেয়েছিলাম। এই প্রকল্পটি আমার সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ।” নেটফ্লিক্সের সঙ্গে এই সহযোগিতা তার জন্য একটি বড় মাইলফলক। নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ কনটেন্ট মনিকা শেরগিল বলেছেন, “কৃতি এবং কাজলের মতো প্রতিভাবান অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করা আমাদের জন্য আনন্দের। এই ছবিটি ভারতীয় গল্প বলার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।”
ছবির আকর্ষণ ও প্রভাব
‘দো পত্তি’ শুধুমাত্র একটি রহস্যময় থ্রিলার নয়, এটি গার্হস্থ্য নির্যাতন, ভাইবোনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ঈর্ষার মতো সামাজিক বিষয়গুলোকেও তুলে ধরেছে। ছবিটির গল্প এই বিষয়গুলোকে সংবেদনশীলভাবে উপস্থাপন করেছে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। নেটফ্লিক্সের তথ্য অনুসারে, মুক্তির প্রথম সপ্তাহে এই ছবিটি বিশ্বব্যাপী নন-ইংরেজি ছবির তালিকায় চতুর্থ স্থানে পৌঁছেছে, ৫ মিলিয়ন ভিউ এবং ১০.৭ মিলিয়ন ঘণ্টা দেখা হয়েছে। ভারত, কানাডা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব সহ ১৮টি দেশে এটি শীর্ষ ১০ তালিকায় স্থান পেয়েছে।
তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, ছবিটির ক্লাইম্যাক্সের টুইস্ট কিছুটা প্রত্যাশিত এবং গল্পটি পুরোপুরি রোমাঞ্চ ধরে রাখতে পারেনি। হলিউড রিপোর্টারের একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, “কৃতির অভিনয় ছবিটির প্রধান আকর্ষণ, তবে গল্পটি কিছুটা বিভ্রান্তিকর।” তবুও, কৃতির দ্বৈত চরিত্র এবং কাজলের শক্তিশালী পুলিশ অফিসারের ভূমিকা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
কৃতি স্যাননের ‘দো পত্তি’ তার ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দ্বৈত ভূমিকায় তার অভিনয় এবং প্রযোজক হিসেবে তার অভিষেক তাকে বলিউডের একজন শক্তিশালী এবং বহুমুখী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কাজলের সঙ্গে তার রসায়ন এবং গল্পের রহস্যময় বিন্যাস দর্শকদের জন্য একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে। নেটফ্লিক্সে ২৫ অক্টোবর থেকে স্ট্রিমিং শুরু হওয়া এই ছবিটি থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য একটি অবশ্যদ্রষ্টব্য। কৃতির এই গোপন দ্বৈত ভূমিকা এবং ছবির সাসপেন্স দর্শকদের মন জয় করেছে, এবং এটি তার ক্যারিয়ারের আরেকটি উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।