Bengal Agriculture Crisis পশ্চিমবঙ্গের আম ও লিচু, যা রাজ্যের কৃষি ঐতিহ্য ও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এই ফলগুলি শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারে জনপ্রিয় নয়, বরং দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অস্বাভাবিক আবহাওয়া, তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আম ও লিচু চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি কৃষকদের জীবিকা এবং রাজ্যের অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
Read Hindi: जलवायु परिवर्तन कैसे बंगाल के आम और लीची की फसलों को नष्ट कर रहा है
**জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
গত কয়েক দশকে, পশ্চিমবঙ্গে গড় তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আম ও লিচু গাছের ফলনের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অত্যধিক গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়া ফলের ফলন হ্রাস করছে। উদাহরণস্বরূপ, মালদা জেলা, যা “ভারতের আমের রাজধানী” নামে পরিচিত, সেখানে আমের উৎপাদন গত এক দশকে প্রায় ৩০% কমে গেছে। একইভাবে, উত্তরবঙ্গের লিচু চাষীরা জানাচ্ছেন যে অসময়ে বৃষ্টি এবং তীব্র গরমের কারণে ফলের গুণমান এবং পরিমাণ কমছে।
অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এই সমস্যাকে আরও জটিল করছে। আম ও লিচু ফলনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত বৃষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত বা অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি ফল পড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে, এবং ফলের মিষ্টতা হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে মালদা ও মুর্শিদাবাদে অসময়ে বৃষ্টির কারণে আমের ফলন প্রায় ২০% কমে গেছে। এছাড়া, ঘন ঘন ঝড় এবং সাইক্লোন ফলের গাছের ক্ষতি করছে, যা কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা তৈরি করছে।
**কৃষকদের উপর প্রভাব
এই পরিস্থিতি কৃষকদের জন্য একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, এবং উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলিতে আম ও লিচু চাষের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার কৃষক পরিবার তাদের আয়ের উৎস হারাচ্ছে। ফলন কমে যাওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা মেটাতে না পারায় কৃষকরা ঋণের বোঝায় জর্জরিত হচ্ছেন। অনেকে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বা অন্য পেশায় স্থানান্তরিত হচ্ছেন।
একজন মালদার কৃষক, রমেশ মণ্ডল, বলেন, “আমরা প্রতি বছর আশা করি ভালো ফলন হবে, কিন্তু গরম আর বৃষ্টির অভাবে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। এখন বাজারে আম বিক্রি করেও খরচ উঠছে না।” এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র কৃষকদের জন্যই নয়, স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। আম ও লিচু রপ্তানির উপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
**সমাধানের পথ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করতে বিশেষজ্ঞরা কিছু পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, জলবায়ু-সহনশীল আম ও লিচুর জাত উন্নয়ন করা প্রয়োজন, যা উচ্চ তাপমাত্রা এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত সহ্য করতে পারে। দ্বিতীয়ত, কৃষকদের জন্য আধুনিক সেচ পদ্ধতি এবং জল সংরক্ষণের প্রযুক্তি প্রয়োগ করা উচিত। তৃতীয়ত, কৃষকদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং ফসল বীমা প্রকল্পের প্রসার ঘটানো উচিত। এছাড়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন করা যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের আম ও লিচু চাষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গভীর সংকটের মুখে। এই সমস্যা শুধুমাত্র কৃষকদের জন্য নয়, বরং রাজ্যের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যও হুমকি। তাই, অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কৃষক, সরকার এবং গবেষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। আম ও লিচুর মতো বাংলার গর্ব রক্ষা করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।