কলকাতা: কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে (Kasba Law College) গণধর্ষণ-অভিযোগের জল এবার গড়াল দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) দাখিল করা হয়েছে। যেখানে সরাসরি সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে সুরক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থার আবেদনও করা হয়েছে।
এই মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী সত্যম সিংহ। তাঁর দাবি, রাজ্য পুলিশের তদন্তে নিরপেক্ষতা নেই। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে সরাসরি সিবিআই-এর হাতে তদন্তের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক।
আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই শীর্ষ নেতা—সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্রের বিতর্কিত মন্তব্যের কথাও। এই দুই রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের কারণে তদন্ত প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আর্জিদাতা।
সত্যম সিংহ তাঁর আর্জিতে লিখেছেন, ‘‘এই ঘটনা রাজ্যবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে কলেজ (Kasba Law College) ক্যাম্পাসের মধ্যেই দিনের আলোয় যেভাবে টেনে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা চূড়ান্তভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।’’
আর্জিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘নির্যাতিতার পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই অবিলম্বে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। একইসঙ্গে নির্যাতিতার মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসনের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য এবং পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’’
সত্যম সিংহের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য পুলিশ ইতিমধ্যেই প্রভাবিত। অভিযুক্তদের রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। তাই দ্রুত সিবিআই তদন্ত ছাড়া প্রকৃত সত্য প্রকাশ অসম্ভব।’’ সূত্রের খবর, এই আর্জির শুনানি খুব শীঘ্রই হতে পারে।
প্রসঙ্গত, কসবা ল’ কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে ইতিমধ্যেই রাজ্যের রাজনীতি উত্তাল। অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের আগের অপরাধমূলক ইতিহাসও সামনে এসেছে।
সাংবাদিক বৈঠকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মদন মিত্রের মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে নির্যাতিতার চরিত্রহননের ইঙ্গিত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, মদন মিত্রও অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে দাবি বিরোধীদের।
এখন সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানিতে কী নির্দেশ দেয়, সেদিকে নজর রাখছেন সকলে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যদি শীর্ষ আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, তাহলে রাজ্যের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।
রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন এবং মহিলা সুরক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি উঠেছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ঘোষণা না হলেও, সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্ট আগামী সপ্তাহেই এই মামলার শুনানি করতে পারে।