রিটেইল সেক্টরে ফের উত্থান, মে মাসে ৭% বৃদ্ধি

ভারতের রিটেইল বা খুচরো বিক্রির ক্ষেত্র (Retail Sector in India) , যা বর্তমানে আনুমানিক ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়, তা পুনরায়…

India’s Retail Market girl

ভারতের রিটেইল বা খুচরো বিক্রির ক্ষেত্র (Retail Sector in India) , যা বর্তমানে আনুমানিক ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়, তা পুনরায় একটি শক্তিশালী ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। রিটেইলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (RAI)-এর মতে, এই খাতের বৃদ্ধি আগামী মাসগুলোতে দ্রুত গতিতে বাড়তে পারে।

বর্তমানে এই সেক্টরটি প্রতি বছর প্রায় ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে RAI-এর বিশ্বাস, এই বৃদ্ধি শীঘ্রই ৯-১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড নিউজ সার্ভিস (IANS)-এর প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

   

RAI-এর সিইও কুমার রাজাগোপালন জানিয়েছেন, মহামারীর পর এই খাতটি প্রথমে অত্যন্ত দ্রুত পুনরুদ্ধার করেছিল, সেই সময়ে প্রায় ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি ঘটেছিল। তবে গত এক বছরে এই গতি ধীরে ধীরে কমে ৫ শতাংশে নেমে আসে। “এখন বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে, ভোক্তারা বেশি ব্যয় করছে এবং একটি উপযুক্ত গ্রাহকভিত্তি গড়ে উঠেছে। এর ফলে খুচরো বিক্রির ক্ষেত্রে আবারও দ্রুত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি ও বিভাগের সাফল্য
RAI-এর ৬২তম রিটেইল বিজনেস সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের খুচরো বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একাধিক মাস ধরে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে ধীরগতি প্রবৃদ্ধির পর এই বৃদ্ধিকে অত্যন্ত ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আঞ্চলিক ভিত্তিতে দেখা যায়, দক্ষিণ ভারত খুচরো বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরে পশ্চিম ভারতে ৭ শতাংশ, উত্তর ভারতে ৬ শতাংশ এবং পূর্ব ভারতে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

এই তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে ভোক্তাদের মধ্যে নতুন করে চাহিদা তৈরি হচ্ছে। শহরগুলির পাশাপাশি ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলেও এই ধরণের প্রবৃদ্ধি দেখা দিচ্ছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ।

বিভাগভিত্তিক পারফরম্যান্স
বিভাগ অনুযায়ী যদি দেখা হয়, কুইক সার্ভিস রেস্টুরেন্ট (QSR) বা দ্রুত সেবা রেস্টুরেন্ট খাতটি সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। এই খাতের বিক্রি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোক্তারা খাবার-দাবার ও রেস্তোরাঁয় খরচ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা স্পষ্টতই সামাজিক মেলামেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

কনজিউমার ডিউরেবলস ও ইলেকট্রনিক্স খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি বোঝায় যে, মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে ইলেকট্রনিক পণ্য এবং টেকনোলজি বেসড সামগ্রীতে বিনিয়োগ করছে। একইভাবে, ফার্নিচার খাতও ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি মানুষের হোম ইমপ্রুভমেন্টের দিকে ঝোঁক বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

Advertisements

তদুপরি, ফ্যাশন এবং ফুটওয়্যারের মতো অন্যান্য বিভাগগুলিতেও ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়ছে। মানুষ এখন নতুন পোশাক, জুতো, ও অন্যান্য লাইফস্টাইল পণ্য কিনতে আগ্রহী হচ্ছে, যা প্রাক-মহামারী সময়ের চাহিদার ধারা ফিরিয়ে আনছে।

ভোক্তাদের মনোভাব ও ভবিষ্যতের আশা
রাজাগোপালন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী উৎসবের মৌসুমে খুচরো বিক্রি আরও চাঙ্গা হবে। ভারতে উৎসবের সময়কাল — যেমন দুর্গাপুজো, দীপাবলি, নববর্ষ ইত্যাদি — বরাবরই ভোক্তাদের জন্য এক বড় খরচের সময়। এই সময়ে বিভিন্ন অফার, ডিসকাউন্ট এবং নতুন পণ্য উন্মোচন গ্রাহকদের আরও বেশি কেনাকাটায় উদ্বুদ্ধ করে।

তিনি আরও জানান, “ভোক্তাদের মনের ইতিবাচক পরিবর্তন আমাদের সেক্টরের জন্য একটি বড় সুযোগ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই আমরা খুচরো বিক্রিতে দ্বিঅঙ্কের প্রবৃদ্ধি (ডাবল-ডিজিট গ্রোথ) দেখতে পাব।”

অর্থনীতিবিদ এবং বাজার বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান নগরায়ন, ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার এবং মিডল-ক্লাসের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এই প্রবৃদ্ধিকে আরও বেগ দেবে। করোনাকালীন সীমাবদ্ধতার পর মানুষ নতুন করে বাইরে বেরিয়ে কেনাকাটা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, এবং অনলাইন শপিংয়ের সাথেও অনেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এর ফলে অনলাইন ও অফলাইন — উভয় চ্যানেলে বিক্রির সম্ভাবনা সমানভাবে উজ্জ্বল।

সবমিলিয়ে বলা যায়, ভারতের রিটেইল সেক্টর নতুন করে গতি পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই মে মাসে বিক্রির যে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, তা আগামীর জন্য বড় আশা জাগাচ্ছে। উৎসবের মৌসুম এবং ভোক্তাদের মধ্যে পুনরায় ক্রয় আগ্রহ এই বৃদ্ধিকে আরও মজবুত করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই ইতিবাচক ধারা কতদূর অব্যাহত থাকে এবং ভারতীয় অর্থনীতির সার্বিক বৃদ্ধিতে কতটা অবদান রাখতে পারে রিটেইল সেক্টর।