SHG-এর মহিলাদের জন্য সহজ ঋণ, বাজেটে ঘোষিত GCS-এর নতুন উদ্যোগ

Grameen Credit Score: আজকের দিনে ভারত বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, অবকাঠামো, ফিনটেকসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত অগ্রগতি লক্ষ্য করা…

Budget 2025: Grameen Credit Score Boosts Easy Loans for SHG Women

Grameen Credit Score: আজকের দিনে ভারত বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, অবকাঠামো, ফিনটেকসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবুও, ভারতের আসল শক্তি আজও তার গ্রামীণ অর্থনীতিতে নিহিত। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন এবং দেশের জিডিপি-তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তবে এই বৃদ্ধির ইঞ্জিনের পিছনেও কিছু সমস্যার ছায়া রয়েছে। তার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো গ্রামীণ ঋণের ঘাটতি বা ক্রেডিট গ্যাপ।

গ্রামীণ ঋণের চ্যালেঞ্জ
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৬ কোটির বেশি ভারতীয় ‘ক্রেডিট আন্ডারসার্ভড’ বা যথাযথভাবে ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর প্রধান কারণ হলো গ্রামীণ ঋণদাতাদের দৃষ্টিতে গ্রামীণ ঋণগ্রহীতারা ‘হাই রিস্ক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদের অনিয়মিত আয়, সঠিক জামানত ও ক্রেডিট ইতিহাসের অভাবের কারণে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এছাড়া, অবকাঠামোগত ও লজিস্টিক বাধাও ঋণ বিতরণে বড় প্রতিবন্ধকতা।

   

ফলে, গ্রামের মানুষ প্রায়ই বেসরকারি মহাজনদের দ্বারস্থ হন, যারা অত্যধিক সুদের হারে ঋণ দেয়। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামীণ পরিবারের প্রায় ৩১ শতাংশ ঋণ এখনও এই ধরনের অনানুষ্ঠানিক ঋণদাতার কাছ থেকে নেওয়া হয়। এর ফলে গ্রামের অর্থনীতিতে ঋণের ফাঁদ আরও গভীর হয়।

ঋণ আদায়ে মানবিকতা: বাধ্যবাধকতা থেকে ক্ষমতায়নের পথে
ঋণ বা EMI সংগ্রহ পদ্ধতিতেও পরিবর্তনের প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র আর্থিক আদায়ের কাজ না হয়ে বরং গ্রাহকদের ক্ষমতায়নের মাধ্যম হওয়া উচিত। সময়মতো ঋণ পরিশোধ করলে কেবল ঋণগ্রহীতার ভবিষ্যতের ঋণ সক্ষমতাই বৃদ্ধি পায় না, বরং অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাসও তৈরি হয়।
মানবিক এবং সহানুভূতিশীল ঋণ আদায় পদ্ধতি ঋণগ্রহীতার মর্যাদা রক্ষা করে এবং লেনদারের ওপর বিশ্বাস বাড়ায়। এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা সহজ হয় এবং সুশৃঙ্খল ঋণ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

গ্রামীণ ক্রেডিট স্কোর (GCS): ঋণ প্রবাহের নতুন দিগন্ত
২০২৫ সালের বাজেটে ঘোষিত গ্রামীণ ক্রেডিট স্কোর (GCS) প্রকল্প গ্রামীণ মানুষের ঋণ প্রবেশাধিকার বাড়ানোর লক্ষ্যে আনা হয়েছে। এই স্কোরের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন, আয় প্যাটার্ন এবং অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর উপাদানগুলো বিবেচনা করে ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হবে।
GCS-এর মাধ্যমে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী (SHG)-এর নারীদের ঋণ পাওয়া সহজ হবে। এর ফলে তারা নিজেদের ব্যবসা প্রসারিত করতে পারবে, পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে এবং ক্রেডিট স্কোর, ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়া, EMI প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা অর্জন করবে।

মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও SHG-এর অবদান
বিশেষ করে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে GCS একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। SHG-এর সদস্যরা সঠিক ও মানসম্পন্ন ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে সহজে ঋণ পাবে, যা তাদের উদ্যোক্তা স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করবে।
এই ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীরা তাদের পরিবারকে সমর্থন করবে, সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রাখবে।

Advertisements

শেষ মাইলের নায়ক: বিজনেস করেসপন্ডেন্ট এবং VLE
গ্রামীণ ঋণ পৌঁছে দিতে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি (BC), ভিলেজ লেভেল উদ্যোক্তা (VLE), CSC এবং SHG-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় ভাষা, প্রথা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝার কারণে BC-রা মানুষের সঙ্গে সহজে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

তারা ঋণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে, আর্থিক সচেতনতা সেশনের আয়োজন করতে পারে এবং সময়মতো ঋণ পরিশোধে গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে পারে। এদের মাধ্যমে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে প্রাথমিক হস্তক্ষেপ করা সম্ভব। সঠিক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং ব্যাংকের সহায়তা পেলে BC-রা অত্যন্ত কার্যকরভাবে ঋণ বিতরণ ও আদায়ে ভূমিকা রাখতে পারে।

ক্রেডিট ম্যাক্সিমাইজেশন থেকে অপ্টিমাইজেশনে রূপান্তর
শুধু ঋণ সুবিধা বাড়ালেই চলবে না। ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে। অর্থাৎ, ঋণ সর্বাধিককরণ নয়, বরং অপ্টিমাইজেশন দরকার। এর জন্য পুনরায় পরিশোধ ক্ষমতা যাচাই, ফিনান্সিয়াল লিটারেসি প্রদান, নমনীয় ঋণ পণ্য তৈরি এবং ফলাফল পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য।
তথ্য-ভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে ঋণ আরও সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করা সম্ভব। এতে ঋণগ্রহীতা সুরক্ষিত থাকবে এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।

অতএব, ঋণ ব্যবস্থায় কেবল প্রসার নয়, বরং ব্যক্তিকরণ, অপ্টিমাইজেশন এবং দায়িত্বশীল পরিশোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়োজন। ভারতের উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থা তৈরি করাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত।