রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর (Moscow) কাছে একটি বিমান দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা সকল যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫-এ ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনাটি রাশিয়ার বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। (Moscow)ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভি নিউজের একটি পোস্টে জানানো হয়েছে, “রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বিমান দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে, বিমানে থাকা সকলের মৃত্যু।” এই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও স্পষ্ট না হলেও, সামাজিক মাধ্যমে এই দুর্ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
২৮ জুন, ২০২৫-এ মস্কোর (Moscow) কাছে একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একটি স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এর পোস্ট অনুযায়ী, দুর্ঘটনাটি মস্কোর সেভেরকা এয়ারফিল্ডের কাছে ঘটেছে। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, বিমানটি একটি হালকা বিমান ছিল এবং পাইলট একটি ইউ-টার্ন করার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে। রাশিয়ার তদন্ত কমিটি জানিয়েছে যে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে, বিমানের ধরন, যাত্রীর সংখ্যা এবং দুর্ঘটনার সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এই দুর্ঘটনা রাশিয়ার সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার তালিকায় আরেকটি মর্মান্তিক সংযোজন। গত কয়েক বছরে রাশিয়ায় একাধিক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০১৯ সালে মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে এয়ারোফ্লট ফ্লাইট ১৪৯২-এর দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত হয়েছিল এবং ২০২৩ সালে ওয়াগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যু একটি বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো রাশিয়ার বিমান চলাচলের নিরাপত্তার দুর্বলতা তুলে ধরেছে।
সম্ভাব্য কারণ
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, রাশিয়ার বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, পাইলটের ভুল, এবং বৈরী আবহাওয়া প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মস্কোর কাছে একটি সুখোই সুপারজেট ১০০ বিমান পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে, যাতে তিনজন ক্রু নিহত হয়। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে পড়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
এছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন (Moscow) যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার আকাশসীমায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রাশিয়ার প্যান্টসির-এস এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের আঘাতে দুর্ঘটনার শিকার হয়, যদিও রাশিয়া প্রথমে এটিকে পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা বলে দাবি করেছিল। এই ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছিল।
রাশিয়ার বিমান চলাচলের নিরাপত্তা
রাশিয়ার বিমান চলাচল শিল্প গত কয়েক বছরে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বিমান শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশের সংকট দেখা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার পুরনো বিমান বহরের রক্ষণাবেক্ষণে বাধা সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালে রাশিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল, তবে এই সংখ্যা এখনও উদ্বেগজনক।
সুখোই সুপারজেট ১০০, যা রাশিয়ার প্রথম পোস্ট-সোভিয়েত যুগের যাত্রীবাহী বিমান, একাধিক দুর্ঘটনার জন্য সমালোচিত হয়েছে। ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রদর্শনী উড্ডয়নে এই বিমান দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয় এবং ২০১৯ সালে মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে আরেকটি দুর্ঘটনায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়।
সমাজে প্রভাব
এই দুর্ঘটনা রাশিয়ার জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। (Moscow) সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই ঘটনার জন্য রাশিয়ার বিমান চলাচলের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “রাশিয়ার আকাশ আর নিরাপদ নয়। এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, কিন্তু সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “এই দুর্ঘটনা শুধু যাত্রীদের উপর নয়, পুরো দেশের নিরাপত্তার উপর হামলা।”
এই ঘটনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার আকাশসীমায় উত্তেজনা বেড়েছে, এবং ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার জন্য রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। এই পরিস্থিতি বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
তদন্ত ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত শুরু করেছে। তবে, এই ধরনের তদন্তে সাধারণত সময় লাগে, এবং জনগণের মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের জন্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, অতীতের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সরকারের প্রতিক্রিয়া সমালোচিত হয়েছে, বিশেষ করে স্বচ্ছতার অভাব এবং দায়িত্ব নির্ধারণে বিলম্বের জন্য।
মস্কোর কাছে এই বিমান দুর্ঘটনা রাশিয়ার বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রযুক্তিগত ত্রুটি, পাইলটের ভুল, বা বাহ্যিক হুমকি—যাই হোক না কেন কারণ, এই ঘটনা জনগণের মধ্যে ভয় এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
রাশিয়া সরকারের উপর এখন চাপ রয়েছে যাতে তারা দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই দুর্ঘটনা কেবল রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাই নয়, আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রভাবও তুলে ধরেছে।