বর্তমান আর্থিক জগতে মানুষ ধীরে ধীরে আরও সচেতন ও চতুর হয়ে উঠছে, বিশেষ করে অর্থ সঞ্চয়ের (Best Investment) বিষয়ে। বহু বছর ধরে ফিক্সড ডিপোজিট (FD) ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যম। এর নিরাপত্তা ও স্থির রিটার্নের কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে প্রবীণরা, এটি বেছে নিতেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুদের হারের ওঠানামা, মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এবং মানুষের আর্থিক সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে অনেকেই বিকল্প বিনিয়োগের দিকেও ঝুঁকছেন, যেখানে ঝুঁকি কম কিন্তু সম্ভাব্য রিটার্ন বেশি।
কম ঝুঁকির উচ্চ রিটার্ন ফান্ড
যারা একদিকে নিরাপত্তা চান, আবার অন্যদিকে ভালো রিটার্ন পেতে আগ্রহী, তাদের জন্য debt mutual fund, সরকারি বন্ড, লিকুইড ফান্ড এবং হাইব্রিড ফান্ড হতে পারে আকর্ষণীয় বিকল্প। এই ধরনের ফান্ডগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো ফিক্সড ডিপোজিটের চেয়ে বেশি রিটার্ন দেওয়া, কিন্তু খুব বেশি ঝুঁকি ছাড়াই।
উদাহরণস্বরূপ, debt mutual fund মূলত সরকারি এবং কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করে। এগুলি পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সুদের হার কমার সময় এগুলি তুলনামূলকভাবে বেশি রিটার্ন দিতে সক্ষম। একইভাবে, সরকারি সিকিউরিটিজ ও কর্পোরেট বন্ড ফান্ডও স্থিতিশীল এবং নিরাপদ বিবেচিত হয়, যা তাদেরকে রক্ষণশীল বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
একটি বড় সুবিধা হলো এই ফান্ডগুলির ফ্লেক্সিবিলিটি। ফিক্সড ডিপোজিটের মতো নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থ তুলে নিতে গেলে শাস্তিমূলক চার্জ দিতে হয় না। প্রায়ই বিনিয়োগকারী চাইলে সহজেই অর্থ তুলে নিতে পারেন। উপরন্তু, তিন বছরের বেশি সময় ধরে এই ফান্ডে বিনিয়োগ করলে indexation সুবিধার মাধ্যমে করের হার কমানো যায়, যা ফিক্সড ডিপোজিটের তুলনায় বড় সুবিধা।
তবে কিছু ঝুঁকি অবশ্যই আছে। সুদের হারের পরিবর্তন বা কোনো কর্পোরেট বন্ডে খেলাপির ঝুঁকি (default risk) থেকে যায়। তবুও, সাধারণভাবে ঝুঁকি খুব কম এবং সম্ভাব্য রিটার্ন তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই, যারা সামান্য ঝুঁকি নিতে রাজি, তাদের জন্য এই ধরনের ফান্ড এক চমৎকার বিকল্প।
ফিক্সড ডিপোজিট (FD)
ফিক্সড ডিপোজিট বহু বছর ধরে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে প্রিয় নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম। এখানে বিনিয়োগকৃত মূল অর্থ নিরাপদ থাকে এবং আগেই নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট সুদের হার অনুযায়ী রিটার্ন পাওয়া যায়। ফলে বাজারের ওঠানামার প্রভাব পড়ে না। বিশেষ করে যাদের ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছে নেই, যেমন প্রবীণ নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বা নিয়মিত আয়ের খোঁজে থাকা মানুষ, তাদের জন্য FD একটি নির্ভরযোগ্য পছন্দ।
FD খোলা এবং পরিচালনা করা খুব সহজ। যে কোনো ব্যাংক বা NBFC-তে গিয়ে সহজেই একাউন্ট খোলা যায়। এছাড়াও, ব্যাংকের FD-তে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীর মনে আরও নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়।
তবে, এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি বেশি হলে FD-এর রিটার্ন বাস্তবে খুব একটা লাভজনক থাকে না। উপরন্তু, FD-এর সুদ আয় হিসেবে গণ্য হয় এবং পুরোপুরি আয়করের আওতাভুক্ত হয়। ফলে হাতে আসল রিটার্ন আরও কমে যায়। যদি অগ্রিম অর্থ তোলা প্রয়োজন হয়, তখন penalty বা শাস্তিমূলক চার্জও দিতে হয়, যা FD-এর ফ্লেক্সিবিলিটিকে হ্রাস করে।
তুলনা: FD বনাম কম ঝুঁকির ফান্ড
তাহলে প্রশ্ন আসে — কোনটি ভালো? উত্তর নির্ভর করছে বিনিয়োগকারীর প্রয়োজন ও মানসিকতার ওপর। যদি আপনি ১০০% নিরাপত্তা চান এবং নির্দিষ্ট আয়ই মুখ্য, তাহলে FD আপনার জন্য সঠিক। এটি ঝুঁকিমুক্ত এবং সহজবোধ্য।
কিন্তু যদি আপনার লক্ষ্য হয় সামান্য ঝুঁকি নিয়ে FD-এর চেয়ে ভালো রিটার্ন, বেশি ফ্লেক্সিবিলিটি, এবং কর সাশ্রয়, তাহলে কম ঝুঁকির ফান্ড হতে পারে সেরা বিকল্প। বিশেষ করে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য debt mutual fund, সরকারি বন্ড ও লিকুইড ফান্ড যথেষ্ট উপযোগী।
আজকের দিনে, অর্থনৈতিক পরিবর্তনশীলতা, সুদের হারের ওঠানামা এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির ফলে শুধু নিরাপত্তার কথা ভাবলেই হবে না — রিটার্ন এবং করের দিকও বিবেচনা করা দরকার। এ কারণে অনেকেই এখন বিকল্প বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন।
শেষমেষ বলা যায়, বিনিয়োগের আগে নিজস্ব আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকির সহনশীলতা এবং সময়সীমা বিচার করে তবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। একটি সঠিক মিশ্রণই আপনার অর্থকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্যও বাড়িয়ে তুলতে পারে।