ঋণ বৃদ্ধিতে লিকুইডিটি যথেষ্ট নয়, বলছে ব্যাংক রিপোর্ট

Credit Growth: অর্থনীতিতে ক্রেডিট বৃদ্ধির হার মূলত সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে, শুধুমাত্র লিকুইডিটির উদ্বৃত্তের আকারের ওপর নয়। আন্তর্জাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সাম্প্রতিক এক…

Buy New Smartphones on Easy EMI Loans

Credit Growth: অর্থনীতিতে ক্রেডিট বৃদ্ধির হার মূলত সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে, শুধুমাত্র লিকুইডিটির উদ্বৃত্তের আকারের ওপর নয়। আন্তর্জাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি উল্লেখ করেছে যে, লিকুইডিটির বড়ো উদ্বৃত্ত থাকলে কিছুটা সহায়তা মেলে বটে, বিশেষ করে সিকিউরড লোন ছাড়া পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে (যেখানে কনজ্যুমার ডিউরেবল লোন অন্তর্ভুক্ত নয়)। তবে এর অর্থ এই নয় যে অর্থনীতির সব খাতে একযোগে ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

   

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি লিকুইডিটি উদ্বৃত্তের আকারের ওপর নয়, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে। তবে, লিকুইডিটির বড়ো উদ্বৃত্তের সময় পার্সোনাল লোন (কনজ্যুমার ডিউরেবল বাদে) কিছুটা বেশি বাড়তে পারে।”

প্রকৃতপক্ষে, প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, যখন লিকুইডিটির উদ্বৃত্ত বেশি থাকে, তখন সিকিউরড লোন এবং কনজ্যুমার ডিউরেবল বাদে অন্যান্য ক্রেডিটের বৃদ্ধি প্রায়শই কমে যায়। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত ক্রেডিটের চাহিদাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বলেছে, “যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীর হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায়ই লিকুইডিটি উদ্বৃত্ত বাড়ানোর মতো নীতি গ্রহণ করে, যা একটি কাউন্টার-সাইক্লিক্যাল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।”

তবে, এই ধরনের প্রচেষ্টার পরও অতীতে দেখা গেছে যে, লিকুইডিটির উদ্বৃত্ত বেশি থাকার সময় সামগ্রিক ক্রেডিট (পার্সোনাল এবং কনজ্যুমার ডিউরেবল লোন বাদে) জিডিপির অনুপাতে হ্রাস পেয়েছে।

প্রতিবেদনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে, যখন লিকুইডিটি উদ্বৃত্ত নেট ডিমান্ড অ্যান্ড টাইম লাইয়াবিলিটিজের (NDTL) ২.৬ শতাংশ থেকে ৩.৩ শতাংশের মধ্যে ছিল, তখন ক্রেডিটের অনুপাত জিডিপির তুলনায় ৪৮.৯ শতাংশ থেকে কমে ৪৬.২ শতাংশে নেমে আসে। এই হ্রাস ধারা ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

অন্যদিকে, পার্সোনাল লোনের (কনজ্যুমার ডিউরেবল বাদে) প্রবৃদ্ধি গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই লোনের আকার জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

Advertisements

এই প্রবৃদ্ধি মূলত গঠনমূলক বা স্ট্রাকচারাল কারণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। যেমন, মানুষের ক্রেডিট অ্যাক্সেস বা ঋণ গ্রহণের সুবিধা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে ডিজিটাল লেন্ডিংয়ের উত্থানও বড়ো ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, লিকুইডিটির উদ্বৃত্ত যখন বেশি থাকে, তখন এই পার্সোনাল লোনের প্রবৃদ্ধির গতি আরও ত্বরান্বিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কালে, যখন অর্থনীতিতে বড়ো আকারের লিকুইডিটি উদ্বৃত্ত এবং সহজ ক্রেডিট শর্ত বিদ্যমান ছিল, তখন পার্সোনাল লোনের জিডিপি অনুপাতে অংশ আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই সময়ে, ভারতের অর্থনীতিতে বিভিন্ন খাতের ওপর করোনার প্রভাব থাকলেও, ব্যক্তিগত ঋণের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনেক মানুষ স্বল্পমেয়াদী খরচের জন্য বা অপ্রত্যাশিত জরুরি পরিস্থিতির জন্য পার্সোনাল লোনের দিকে ঝুঁকেছে। পাশাপাশি, ডিজিটাল লোনের সহজলভ্যতা এবং একাধিক নতুন ফিনটেক কোম্পানির প্রবেশও এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে।

তবে, প্রতিবেদনটি সতর্ক করে বলেছে যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি স্থিতিশীল না থাকে বা চাহিদা যদি যথেষ্ট না হয়, তাহলে শুধুমাত্র লিকুইডিটি বাড়িয়ে ক্রেডিট বৃদ্ধির হারকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। ফলে, ক্রেডিট বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জোরালো গতি এবং মানুষের আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা।

এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের মতো বিকাশমান অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, চাকরি সৃষ্টি, এবং আয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিকুইডিটির উদ্বৃত্ত শুধুমাত্র একটি সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, তবে সেটি মূল চালিকা শক্তি নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিপোর্টের এই বিশ্লেষণ নীতি প্রণেতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। কারণ এটি বোঝায়, দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উৎপাদন, সেবা এবং কৃষি খাতের মতো প্রাথমিক অর্থনৈতিক স্তম্ভগুলির ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তবেই সঠিক অর্থে টেকসই ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে।