কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শুক্রবার রাজধানী দিল্লিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির (PSU Bank) শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এই বৈঠকে ব্যাঙ্কগুলির সামগ্রিক আর্থিক কর্মদক্ষতা, সরকার-সমর্থিত বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি ও সাম্প্রতিক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) আর্থিক নীতিমালার প্রভাব খতিয়ে দেখা হয়।
এই বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি RBI-এর হঠাৎ আর্থিক সহজীকরণের পর অর্থমন্ত্রীর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল ব্যাঙ্ক প্রধানদের সঙ্গে। RBI-এর গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রার নেতৃত্বে গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটি এই মাসের শুরুতেই রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫.৫ শতাংশে নামিয়ে আনে এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (CRR) ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করে। এই দুই পদক্ষেপ মিলিয়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ২.৫ লক্ষ কোটি টাকার তরলতা সঞ্চার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা ও সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের CEO-রা:
অর্থমন্ত্রকের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডল থেকে জানানো হয়, এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভাগবত কারাদ, অর্থ পরিষেবা দফতরের সচিব এম নাগরাজু এবং ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও-রা। এছাড়াও অর্থমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির FY25-এ রেকর্ড মুনাফা:
অর্থমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সম্মিলিত নিট লাভ দাঁড়িয়েছে ₹১.৭৮ লক্ষ কোটিতে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। FY24-এ সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মিলিয়ে লাভ হয়েছিল ₹১.৪১ লক্ষ কোটি টাকা।
মুনাফার অগ্রদূত স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া:
এই রেকর্ড লাভের মধ্যে একমাত্র স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (SBI) একাই অবদান রেখেছে ₹৭০,৯০১ কোটি টাকার, যা FY24-এর ₹৬১,০৭৭ কোটি টাকার তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। SBI একাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মোট মুনাফার প্রায় ৪০ শতাংশ অর্জন করেছে।
সব ব্যাঙ্কেই লাভের প্রবৃদ্ধি, PNB-র লাভ দ্বিগুণ:
সবচেয়ে বেশি লাভের প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (PNB)। FY25-এ PNB লাভ করেছে ₹১৬,৬৩০ কোটি, যা FY24-এর তুলনায় ১০২ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্ক, যার লাভ ৭১ শতাংশ বেড়ে ₹১,০১৬ কোটিতে পৌঁছেছে।
এই অর্থবছরে সবকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই লাভের বৃদ্ধির মুখ দেখেছে, যা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও রিসার্ভ ব্যাঙ্কের নীতিমালার কার্যকারিতাকে তুলে ধরে।
অর্থমন্ত্রীর বার্তা ও লক্ষ্য:
বৈঠকে নির্মলা সীতারামন ব্যাঙ্ক প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, “ব্যাঙ্কগুলিকে এখন আরও আক্রমণাত্মকভাবে গ্রামীণ ও দুর্বল শ্রেণির মানুষের মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ বাড়াতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা যেন সঠিকভাবে পৌঁছায়, সেটি নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও জানান, MSME, কৃষি ও নারী উদ্যোগীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও নিরাপদ করতে নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী।
GIFT সিটি পরিদর্শন:
এর আগে বৃহস্পতিবার, নির্মলা সীতারামন গুজরাটের গান্ধীনগরে অবস্থিত GIFT সিটিতে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্র (IFSC) পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে GIFT IFSC-র বর্তমান অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “GIFT IFSC হতে পারে ভারতের বৈশ্বিক পুঁজি প্রবাহের একটি বড় দ্বার। আগামী দুই দশকে দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলিকে অর্থের জোগান দেওয়ার একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সময় এসেছে।”
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির FY25-এর ব্যতিক্রমী আর্থিক সাফল্য, RBI-এর সহজীকরণ নীতির তাৎক্ষণিক প্রতিফলন এবং GIFT সিটির মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিকাঠামোর অগ্রগতি—সব মিলিয়ে এটি ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর শক্তিশালী অবস্থানকে তুলে ধরছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই গতি বজায় রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সামাজিক প্রকল্প ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণকে গুরুত্ব দিয়ে।
এই বৈঠক শুধু একটি পর্যালোচনা নয়, বরং একটি সুসংহত অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।