আজ শুক্রবার সকালে মুম্বই শেয়ার বাজারে (BSE) জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের শেয়ারদরে (Jio Financial Shares) প্রায় ৫ শতাংশ উত্থান লক্ষ্য করা গেছে। শেয়ারটি আগের দিনের বন্ধ দর ৩১২.৪০ টাকার তুলনায় ৩১৩.৮৫ টাকায় খোলে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩২৬.৫৫ টাকায় পৌঁছে যায়, যা ৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। সকাল ১১:০৫ নাগাদ শেয়ারটি ৩২৬ টাকায় লেনদেন করছিল, যা ৪.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি। এই নিয়ে চতুর্থ দিনের মতো শেয়ারটির মূল্যবৃদ্ধি হল।
এই বৃদ্ধির মূল কারণ হল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) সম্প্রতি জিও ব্ল্যাকরক ব্রোকিং প্রাইভেট লিমিটেডকে স্টক ব্রোকার এবং ক্লিয়ারিং মেম্বার হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স দিয়েছে। জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস ২৭ জুন এক নিয়ামক ফাইলিংয়ে জানিয়েছে, SEBI থেকে জিও ব্ল্যাকরক ব্রোকিং ২৫ জুন, ২০২৫-এ স্টক ব্রোকার ও ক্লিয়ারিং মেম্বার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে।
জিও ব্ল্যাকরক ব্রোকিং, জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্স প্রাইভেট লিমিটেডের একটি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি। এই ব্রোকারেজ ফার্মের সূচনা এখন ভারতের শেয়ারবাজারে জিও-র উপস্থিতিকে আরও দৃঢ় করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্স-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মার্ক পিলগ্রেম বলেন, “জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্সের মাধ্যমে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যক্তিগত বিনিয়োগ পরামর্শ দিচ্ছি। এখন, আমাদের ব্রোকারেজ শাখার মাধ্যমে আমরা সেইসব বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এক্সিকিউশন প্ল্যাটফর্মও দিতে পারবো যারা নিজেরাই বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে চান।”
SEBI-র তিনটি মূল অনুমোদন:
SEBI এই মাসেই জিও ব্ল্যাকরক ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার্সকে ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজার হিসাবে কাজ করার অনুমতি দেয় (১১ জুন)। তার আগেই, মে মাসে, জিও ব্ল্যাকরক মিউচুয়াল ফান্ড-কে ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার অনুমোদন দেয় SEBI। ফলে এই তিনটি অনুমোদনের মাধ্যমে, জিও ব্ল্যাকরক এখন ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত বিনিয়োগ পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম।
ব্ল্যাকরকের ইন্টারন্যাশনাল হেড র্যাচেল লর্ড বলেন, “এই তৃতীয় অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে আমাদের জয়েন্ট ভেঞ্চারের পরিষেবাগুলি পূর্ণতা পেল। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, জিও ব্ল্যাকরক ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিস্তৃত পরিসরের বিনিয়োগ সমাধান দেবে।”
জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কে ১৯০ কোটি টাকার বিনিয়োগ:
একইসঙ্গে, জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস তাদের পেমেন্টস ব্যাঙ্ক শাখা অর্থাৎ জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্ক লিমিটেড-এ ১৯০ কোটি টাকা মূলধন লগ্নি করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা এই টাকার বিনিময়ে ১৯ কোটি শেয়ারের অধিকার পেয়েছে, যার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা এবং তা পুরোপুরি নগদে পরিশোধ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই লগ্নি জিও পেমেন্টস ব্যাঙ্কের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সেক্টরে আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে আসবে।
শেয়ারের পারফরম্যান্স:
২০২৫ সাল শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের শেয়ারে প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, যা সেনসেক্সের প্রবৃদ্ধির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে গত এক বছরে শেয়ারটির দাম প্রায় ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালের ৩ মার্চ এটি ১৯৮.৬০ টাকায় পৌঁছে ৫২ সপ্তাহের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়, আর ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ৩৬৩ টাকা ছুঁয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক SEBI অনুমোদনগুলি এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত পদক্ষেপের কারণে জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবসায়িক পরিধি এবং বাজারমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। স্টক মার্কেটে এর ইতিবাচক প্রতিফলন আগামী দিনেও অব্যাহত থাকতে পারে।
একটি শক্তিশালী আর্থিক হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবে জিও ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস ভারতের আর্থিক খাতে নিজেদের অবস্থান ক্রমাগত সুদৃঢ় করছে। SEBI-এর অনুমোদন ও পেমেন্টস ব্যাঙ্কে মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে এই কোম্পানি আগামী দিনে পুঁজিবাজার, বিনিয়োগ পরামর্শ এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সেক্টরে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রভাব শেয়ারবাজারে ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠতে পারে।