ভারতের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং দেশীয় শেয়ারবাজার ক্রমাগত ভালো পারফরম্যান্স করছে। এই কারণে অনেক প্রবাসী ভারতীয় (NRI)-র ভারতীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে (Investment) আগ্রহ বেড়েছে। শুধু আর্থিক লাভ নয়, নিজের মাতৃভূমির সঙ্গে আর্থিক সংযোগ বজায় রাখার জন্যও তাঁরা এই পথে এগোতে চান।
তবে বসবাসরত ভারতীয়দের (Resident Indian) তুলনায় প্রবাসীদের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল, কারণ তাদের মানতে হয় রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার (SEBI) বিশেষ নিয়ম। এই নিয়মগুলি যথাযথভাবে না মানলে আইনত কোনো প্রবাসী ভারতের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন না।
প্রবাসীরা কীভাবে ভারতীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন?
প্রবাসীরা মূলত দুটি রুট ব্যবহার করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন:
১. পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট স্কিম (PIS)
২. নন-পিআইএস রুট (Non-PIS)
পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট স্কিম (PIS) কী?
PIS রুটে, প্রবাসীরা ভারতের রেজিস্টার্ড শেয়ারব্রোকারের মাধ্যমে শেয়ার বা কনভার্টিবল ডিবেঞ্চার কিনতে পারেন। তবে তার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়:
NRE (Non-Resident External) বা NRO (Non-Resident Ordinary) অ্যাকাউন্ট
PIS অ্যাকাউন্ট, যা RBI-র অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং নির্ধারিত ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত থাকে
Demat অ্যাকাউন্ট, যেখানে শেয়ারগুলি ডিজিটালভাবে রাখা হয়
Trading অ্যাকাউন্ট, যেটি SEBI অনুমোদিত ব্রোকারদের মাধ্যমে খোলা হয়
এই সমস্ত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে PIS রুটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। এই রুটের মাধ্যমে বিনিয়োগ repatriable (বিদেশে টাকা পাঠানো যায়) অথবা non-repatriable (টাকা দেশে রাখতেই হবে) হতে পারে।
PIS রুটে সমস্ত লেনদেনের রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাংক RBI-কে দেয়, এবং এটি আইনত বাধ্যতামূলক।
নন-পিআইএস (Non-PIS) রুট কী?
নন-পিআইএস রুটের মাধ্যমে প্রবাসীরা নীচের বিনিয়োগগুলো করতে পারেন:
IPO (Initial Public Offering)
মিউচুয়াল ফান্ড
সরকারি বন্ড
ডেট ইনস্ট্রুমেন্টস
এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ETF)
এই রুটে PIS অ্যাকাউন্ট লাগেনা, ফলে প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক সহজ এবং নমনীয়। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে—নন-পিআইএস রুটে সরাসরি শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনাবেচা করা যায় না।
প্রবাসীদের জন্য অতিরিক্ত নিয়মাবলি:
1. ইন্ট্রা-ডে ট্রেডিং নিষিদ্ধ – অর্থাৎ একই দিনে শেয়ার কিনে বিক্রি করা যাবে না। শুধু ডেলিভারি ভিত্তিক ট্রেডিং অনুমোদিত, যেখানে শেয়ার অন্তত একদিনের জন্য রাখতে হবে।
2. RBI সেক্টরাল লিমিট – কিছু নির্দিষ্ট সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগ সীমিত, যেমন প্রতিরক্ষা, মিডিয়া, কৃষি ইত্যাদি। তাই বিনিয়োগের আগে নিয়মগুলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার।
3. কর সংক্রান্ত বিধান (Taxation) –
Short-term Capital Gains (STCG): ১৫% কর ধার্য
Long-term Capital Gains (LTCG): ₹১ লক্ষ ছাড়ের পর ১০% কর
শেয়ারব্রোকার সংস্থা বা ব্যাংক সাধারণত TDS (Tax Deducted at Source) কেটে রাখে।
অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপসমূহ:
1. প্রথমে NRE বা NRO অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
2. এরপর PIS অনুমোদনের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
3. Demat ও Trading অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য SEBI অনুমোদিত ব্রোকার বেছে নিতে হবে।
4. সমস্ত অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত করে লেনদেন শুরু করা যাবে।
কোনটা বেছে নেবেন – PIS না Non-PIS?
আপনি যদি শেয়ারবাজারে সরাসরি ট্রেড করতে চান, তবে PIS রুট বাধ্যতামূলক।
আপনি যদি শুধু মিউচুয়াল ফান্ড, ETF বা IPO-তে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, তবে Non-PIS রুট যথেষ্ট।
প্রবাসীদের জন্য পরামর্শ:
বর্তমানে বহু ব্যাংক যেমন ICICI, HDFC, SBI এবং ব্রোকার সংস্থা যেমন Zerodha, Groww প্রবাসীদের জন্য বিশেষ NRI ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস দিয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি ডকুমেন্টেশন, অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা সহ যাবতীয় জটিলতা কমিয়ে একটি স্মার্ট ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া তৈরি করেছে।
ভারতের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা এখন আর শুধুমাত্র দেশীয়দের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। প্রবাসীরাও চাইলে আইনি এবং সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারেন। প্রয়োজন শুধু সঠিক দিশা, নিয়মাবলি সম্পর্কে জ্ঞান এবং একটি বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম।
সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে প্রবাসীরা সহজেই ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে উপকৃত হতে পারেন এবং তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে এক দৃঢ় আর্থিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারেন।