ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে শুরু হয়েছে এক নতুন সোনালি অধ্যায়। ৪১ বছর পর ফের আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ পা রাখলেন ভারতীয় নভোচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। উৎক্ষেপণের একদিন পর, বৃহস্পতিবার মহাকাশ থেকে পাঠানো একটি হৃদয়গ্রাহী ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, তিনি “তীব্র মোহে আপ্লুত”।
“নমস্কার, স্পেস থেকে। আমি আমার সহযাত্রীদের সঙ্গে এখানে থাকতে পেরে খুবই খুশি,” বললেন শুভাংশু। যোগ করলেন, “চল্লিশ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ হতেই আমার একটাই ইচ্ছা ছিল মহাকাশে পৌঁছনো। আর সেই যাত্রা ছিল অসাধারণ।”
আবেগে কাঁপল কণ্ঠ, কৃতজ্ঞতা জানালেন সবাইকে
শুধু নিজের জন্য নয়, সাফল্যের ভাগীদার হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন পরিবার ও বন্ধুদের। বললেন, “এটা আমার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়। পরিবারের সমর্থন ও বন্ধুদের সাহচর্যই আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।”
ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁর সঙ্গে একটি সফট টয় রয়েছে একটি হংস (সাঁইয়া বাঘা)। শুভাংশু জানান, “ভারতীয় সংস্কৃতিতে হংস বুদ্ধির প্রতীক। তাই এটি আমি সঙ্গে এনেছি।” তিনি আরও বলেন, “দৃশ্যপট উপভোগ করছি। শিখছি কীভাবে এই ভিন্ন পরিবেশে খাবার খেতে হয়।”
“আমি একা নই”-কাঁধে জাতীয় পতাকা, হৃদয়ে গোটা ভারত Shubhanshu Shukla emotional message
এই যাত্রায় শুভাংশুর কাঁধে ছিল ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই পতাকা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি একা নই। সমস্ত ভারতবাসী এই যাত্রার অংশ।”
প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা: ৭.৫ কিমি/সেকেন্ড গতিতে পৃথিবীর কক্ষপথে
উৎক্ষেপণের ঠিক এক ঘণ্টা পর তাঁর প্রথম ভিডিও বার্তায় শুভাংশু জানান, “আমরা পৃথিবীর চারপাশে ৭.৫ কিমি/সেকেন্ড বেগে ঘুরছি।” সেই সঙ্গে স্মরণ করেন ভারতের পূর্ববর্তী মানব মহাকাশ অভিযানের—৪১ বছর পর ভারত ফের এক নভোচারীকে মহাকাশে পাঠাল।
মহাকাশ অভিযানে ভারতের নতুন অধ্যায়
এই মিশন ভারতের জন্য শুধুই একটি প্রযুক্তিগত কৃতিত্ব নয় এটি মহাকাশ গবেষণার দ্বিতীয় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক বছর আগেই Axiom Space-এর নেতৃত্বে চার দেশের এক যৌথ মিশন সফল হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় এই প্রথম কোনও ভারতীয় নভোচারী ISS-এ পৌঁছলেন, যা ভারতীয় মহাকাশ অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ করল।
বিশ্বমঞ্চে ভারতের উদযাপন
ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন-৯ রকেটে উঠে ISS-এর দিকে যাত্রা করেন শুভাংশু। এই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্তে ভারত, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও আমেরিকার হাজারো মানুষ ওয়াচ পার্টিতে অংশ নেন। এটি সেই একই উৎক্ষেপণ কেন্দ্র, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং।
শুভাংশুর যাত্রা এখানেই শেষ নয়। মহাকাশে তাঁর গবেষণা, অভিজ্ঞতা ও নতুন আবিষ্কার সব কিছুর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। কীভাবে এক “গ্রিন কলার” প্রফেশনাল থেকে তিনি হয়ে উঠলেন একজন নভোচারী, সেটাই এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।