রায়পুর: মিরাটের সুটকেস হত্যাকাণ্ডের (Murder) স্মৃতি আবারও ফিরে এল ছত্তিশগড়ের রায়পুরে। শহরের ইন্দ্রপ্রস্থ কলোনি এলাকার একটি জঙ্গলঘেরা ফাঁকা জমি থেকে উদ্ধার হল এক ব্যক্তির সিমেন্টে মোড়া মৃতদেহ। ঘটনার জেরে এলাকায় ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে ওই ফাঁকা জমি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ পেয়ে সন্দেহ করেন। এরপর তাঁরা রায়পুর থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি বড় টিনের বাক্স দেখতে পায়, যা শিকল দিয়ে তালাবন্ধ ছিল। তার ভিতরে ছিল একটি সুটকেস।
পুলিশ যখন সুটকেসটি খুলে দেখে, তখন সিমেন্টে মোড়া অবস্থায় এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মৃতদেহের গলা কাটা ছিল এবং হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ঘটনাটি দু-তিন দিন আগের। মৃত ব্যক্তির নাম কিশোর পাইকরা (বয়স আনুমানিক ৪০ বছর)। পুলিশের ধারণা, দুর্গন্ধ ছড়ানো আটকাতে মৃতদেহটি প্রথমে সিমেন্টে মোড়া হয় এবং তারপর সুটকেসের ভিতর রেখেই আরও একবার সিমেন্টে মুড়ে দেওয়া হয়।
রায়পুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দৌলত রাম (Daulat Ram) জানিয়েছেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা এটিকে প্রেমঘটিত কারণে সংঘটিত খুন বলে মনে করছি।”
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এক পুরুষ এবং এক মহিলা মিলে ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগানো একটি পুরনো গাড়িতে করে ওই টিনের বাক্সটি ঘটনাস্থলে ফেলে দিয়ে গিয়েছিলেন। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ (CCTV Footage) খতিয়ে দেখা হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, গোলবাজারের পেটলাইন এলাকার এক দোকান থেকে ওই টিনের ট্রাঙ্কটি কেনা হয়েছিল। দোকানদার জানান, সোমবার সকালে এক যুবক-যুবতী এসে ট্রাঙ্কটি কিনেছিলেন। তাদের আচরণ ছিল যথেষ্ট সন্দেহজনক।
পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ থেকে গাড়ির বিবরণ এবং সন্দেহভাজনদের চেহারা চিহ্নিত করে। এরপর দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত যুগলকে। ধৃতদের নাম অঙ্কিত উপাধ্যায় ও শিবানি শর্মা।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের রায়পুরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুনের প্রকৃত কারণ জানতে চেষ্টা চালাচ্ছে তদন্তকারী দল। সূত্রের খবর, প্রাথমিক জেরায় ধৃতরা সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা স্বীকার করেছে। তবে তদন্ত এখনও চলেছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, অপরাধের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পনা করেই সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়াও মৃতদেহ লুকানোর জন্য ট্রাঙ্ক এবং সুটকেস ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, দ্রুত চার্জশিট জমা দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। নেটিজেনরা মিরাট সুটকেস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই ঘটনার তুলনা করছেন।
রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সিসিটিভি নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য আরও জোরদার করা হবে।”