কলকাতা: বিজয় মিছিলে বোমা বিস্ফোরণে শিশুমৃত্যু (Death), দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ—এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে ঘিরে ফের উত্তাল বাংলা রাজনীতি। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের, আর এবার এই ঘটনায় মুখ খুলেই বিপাকে পড়লেন নব নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক আলিফা আহমেদ।
নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। কিন্তু বিজয়ের আনন্দ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কারণ তাঁর দলেরই বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমার ফলেই প্রাণ হারিয়েছে দশ বছরের শিশু তামান্না খাতুন।
শোকবার্তায় সরব, এরপর ‘চুপ’ করার বার্তা
ঘটনার পরেই আলিফা আহমেদ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে একটি আবেগঘন বার্তা দেন। তিনি লেখেন:
“আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। দোষীদের যেন দল-বর্ণ নির্বিশেষে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়।”
এই বক্তব্য জনমতেও প্রশংসিত হয়। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ লাগেনি পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় নদিয়া জেলার তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই দলের তরফে বার্তা দেওয়া হয়, এই বিষয়ে আর মুখ না খুলতে। আলিফা আহমেদকে ‘চুপ’ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
রাজনৈতিক মহলের মতে, শিশুমৃত্যুর মতো সংবেদনশীল ঘটনায় দলের তরফে কোনও ভুল বার্তা যেন না যায়, তার জন্যই এই সতর্কতা। ঘটনাটি এখন প্রশাসনের তদন্তাধীন। এমতাবস্থায়, একজন বিধায়কের বক্তব্য ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে প্রমাণ হতে পারে—এই আশঙ্কাতেই দল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কী ঘটেছিল?
ঘটনার সূত্রপাত ১৩ জুন। সেদিন ছিল ভোটের ফলাফল ঘোষণা। তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের পর জয়োল্লাসে বের হয় বিজয় মিছিল। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকেই সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। বোমার আঘাতে মারা যায় তামান্না খাতুন, বড়চাঁদঘর পঞ্চায়েতের মোলন্দা গ্রামের বাসিন্দা।
এই ঘটনার বিরুদ্ধে বামদল ও বিজেপি প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যেই তারা দাবি তুলেছে—ঘটনার পূর্ণ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
রাজনৈতিক চাপ ও দলীয় শৃঙ্খলা
একদিকে দলকে রক্ষা, অন্যদিকে জনসংবেদনার ভারসাম্য—এই দ্বন্দ্বে পড়েছে শাসকদল। আলিফা আহমেদের বক্তব্যের মাধ্যমে দলের তরফে একধরনের দায় স্বীকার উঠে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই দলনেত্রীর ‘চুপ’ থাকার বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
একটি দশ বছরের শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে ধরণের রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য অস্বস্তিকর। এই প্রেক্ষিতে দলনেত্রীর কড়া বার্তা এবং বিধায়কের প্রকাশ্যে নীরবতা—দুটি মিলেই বাংলার রাজনৈতিক আবহে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসনের তদন্ত কোন দিকে এগোয় এবং প্রকৃত দোষীরা আদৌ শাস্তি পায় কিনা।