মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) ফের একবার বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে বাঙালি শ্রমিকদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার, উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের ৩০০ জনেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক, যারা কাজের জন্য রাজস্থানে গিয়েছিলেন, তাদের বাংলাদেশি হিসেবে মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “শুধু বাংলায় কথা বলার জন্য আমাদের শ্রমিকদের এই অপমান ও নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”
ঘটনার বিবরণ
রাজস্থানে আটক হওয়া ইটাহারের শ্রমিকদের অভিযোগ,(Mamata) তারা কাজের জন্য রাজস্থান গিয়েছিলেন এবং তাদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণপত্র যেমন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং প্যান কার্ড ছিল। তবুও স্থানীয় পুলিশ তাদের বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করে।
শ্রমিকদের দাবি, তাদের পরিচয় পত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই হেফাজতে নেওয়া হয় এবং অপমানজনক আচরণ করা হয়। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেন, “বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে আমাদের শ্রমিকদের শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে লক্ষ্য করা হচ্ছে।
এটা ভারতের সংবিধানের (Mamata) মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের শ্রমিকরা ভারতীয় নাগরিক, তাদের আধার, প্যান সব আছে। তবুও তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।” তিনি আরও বলেন, “বাংলায় দেড় কোটি ভিনরাজ্যের শ্রমিক শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন। আমরা কখনো তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করি না। তাহলে আমাদের শ্রমিকদের উপর এই বৈষম্য কেন?”
অনুরূপ ঘটনার পটভূমি (Mamata)
এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি মুম্বইয়ে মুর্শিদাবাদের পাঁচজন শ্রমিক—মিনারুল শেখ, নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, মেহবুব শেখ, ডাবলু শেখ এবং মুস্তফা কামাল—বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে আটক হন। তাদের বিএসএফের হাতে হস্তান্তর করা হয় এবং বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। তবে মমতার হস্তক্ষেপে তিনজন শ্রমিককে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। বাকি দুজন এখনো বিজিবি হেফাজতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মালদহের কালিয়াচকের (Mamata) এক শ্রমিক রাজস্থানে কাজের জন্য গিয়ে খুন হওয়ার ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা এবং বিহারের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ বাড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সদস্য আসিফ ফারুক বলেন, “এই রাজ্যগুলিতে আমাদের শ্রমিকদের বৈধ পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও হেনস্থা করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি।”
রাজনৈতিক বিতর্ক
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার কারণে আমাদের শ্রমিকরা বিপদে পড়ছেন। এটা বিজেপির ষড়যন্ত্র।” (Mamata) তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু দাবি করেছেন, “রাজ্যে কাজের অভাবে শ্রমিকদের ভিনরাজ্যে যেতে হচ্ছে। তৃণমূল এই দায় এড়াতে হেনস্থার অভিযোগ তুলছে।”
বিজেপির আরেক নেতা শমীক ভট্টাচার্য তামিলনাড়ুর উদাহরণ টেনে বলেন, “অ-বিজেপি শাসিত তামিলনাড়ুতেও বাঙালি শ্রমিকদের পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। তৃণমূলের রাজনীতি এখানে অপ্রাসঙ্গিক।” তবে মমতা পাল্টা জবাবে বলেছেন, “বাংলা ভাষা কোনো অপরাধ নয়। আমাদের শ্রমিকরা ভারতীয় নাগরিক। তাদের উপর এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এক্স-এ এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বাংলা বলার জন্য শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে আটক করা হাস্যকর। বিজেপির এই মানসিকতা ভারতের ঐক্যের জন্য হুমকি।” আরেকজন লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় শ্রমিকরা ফিরে আসছেন। জয় বাংলা!”
কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা
মমতা অভিযোগ করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে নীরব রয়েছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের উচিত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করা দরকার।” তিনি বিএসএফের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, যারা কোনো যাচাই ছাড়াই শ্রমিকদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে।
বাগদানের পর সম্পর্ক ভাঙছে নাইট তারকার! বিশেষ কারণে থমকে গেল বিয়ে
পরিস্থিতি ও সমাধান
রাজস্থানের ঘটনায় আটক শ্রমিকদের মুক্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কাজ শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর(Mamata) নির্দেশে পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ রাজস্থান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটায় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এই অত্যাচারের মূলে রয়েছে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পক্ষপাত।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের এক সদস্য বলেন, “আমরা শ্রমিকদের পাশে আছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় এই সমস্যা বাড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের শ্রমিকরা ভারতের অন্যতম শ্রমশক্তি। তাদের অবমাননা করা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করছে।”
ইটাহারের শ্রমিকদের (Mamata) আটকের ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ এই বিষয়ে গভীর সামাজিক উদ্বেগের প্রতিফলন। তিনি বলেছেন, “বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব। এটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে আমরা চুপ থাকব না।” এই ঘটনা ভারতের ফেডারেল কাঠামো এবং আঞ্চলিক ঐক্যের প্রশ্ন তুলেছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ এখন জরুরি।