লোন নাকচ হচ্ছে বারবার? সাবধান হোন এই ৫টি মিথ্যে বিশ্বাস থেকে

বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় ঋণ (Loan) গ্রহণ অনেকের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। চাকরি পেতে যেমন সিভি দরকার, তেমনই ঋণ পেতে দরকার ভালো ক্রেডিট স্কোর। কিন্তু অনেক…

Why Indian SMEs Avoid Loans Despite Good Credit

বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় ঋণ (Loan) গ্রহণ অনেকের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। চাকরি পেতে যেমন সিভি দরকার, তেমনই ঋণ পেতে দরকার ভালো ক্রেডিট স্কোর। কিন্তু অনেক সময় ভালো বেতন, সময়মতো লোন পরিশোধ বা কম ঋণ থাকা সত্ত্বেও ঋণ আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো— ক্রেডিট স্কোর নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা। এই প্রতিবেদনে থাকছে এমনই পাঁচটি প্রচলিত মিথ ও

কীভাবে আপনি আপনার ক্রেডিট স্কোর উন্নত করতে পারেন, তার পরামর্শ।
মিথ ১: উচ্চ বেতন মানেই ভালো ক্রেডিট স্কোর:
অনেকেই মনে করেন, মোটা বেতন মানেই ঋণ পেতে সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবে উচ্চ আয় আপনার ক্রেডিট স্কোরের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নয়। ক্রেডিট ব্যুরো বা ঋণ প্রদানকারী সংস্থা আপনার ক্রেডিট ইতিহাস, ঋণের ধরন, সময়মতো কিস্তি পরিশোধ এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের পরিমাণ— এই সব বিশ্লেষণ করে স্কোর নির্ধারণ করে।

   

মিথ ২: নিজের ক্রেডিট স্কোর চেক করলে স্কোর কমে যায়:
এটি একটি অত্যন্ত প্রচলিত ভুল ধারণা। আসলে নিজে নিজের স্কোর চেক করলে সেটি ‘সফট ইনকোয়ারি’ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এতে কোনোভাবেই আপনার স্কোরের ক্ষতি হয় না। স্কোরে প্রভাব পড়ে তখন, যখন বহুবার বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থা আপনার স্কোর যাচাই করে, যা ‘হার্ড ইনকোয়ারি’ হিসেবে ধরা হয়।

মিথ ৩: পুরনো ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করা ভালো সিদ্ধান্ত:
অনেকেই ভাবেন, পুরনো ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করলে আর্থিক দায় কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এটি আপনার ক্রেডিট ইতিহাস ছোট করে তোলে এবং আপনার ক্রেডিট ব্যবহারের অনুপাত (Credit Utilisation Ratio) বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে, আপনার স্কোর কমে যেতে পারে।

মিথ ৪: আগেভাগেই ঋণ শোধ করলে স্কোর বাড়ে:
অবশ্যই ঋণ পরিশোধ ভালো অভ্যাস, কিন্তু ক্রেডিট স্কোরের দৃষ্টিকোণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— নিয়মিত ও সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করা। আপনি যদি সবসময় সময়মতো EMI পরিশোধ করেন, তাহলে তাতেই স্কোর ইতিবাচক থাকে। আগে শোধ করলেই স্কোর বেড়ে যাবে, এটা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

Advertisements

মিথ ৫: কোনো ক্রেডিট ইতিহাস না থাকা মানেই আপনি দায়িত্বশীল:
অনেক তরুণ-তরুণী ভাবেন, তারা যদি কখনও ঋণ না নেন বা ক্রেডিট কার্ড না ব্যবহার করেন, তাহলে তারা ভালো গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। বাস্তবতা হলো, ক্রেডিট ইতিহাস না থাকলে ব্যাংক বা ঋণদাতা সংস্থা আপনার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা মূল্যায়ন করতে পারে না, ফলে তারা আপনাকে উচ্চ ঝুঁকির গ্রাহক হিসেবে দেখে এবং ঋণ না-ও দিতে পারে।

তাহলে কীভাবে আপনি আপনার ক্রেডিট স্কোর উন্নত করবেন?
১. সময়মতো EMI ও ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ করুন:
কোনো কিস্তি বাদ পড়া বা বিল বকেয়া থাকা আপনার স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. ক্রেডিট ব্যবহারের অনুপাত ৩০%-এর নিচে রাখুন:
ধরুন আপনার ক্রেডিট লিমিট ₹১,০০,০০০, তাহলে এক মাসে ₹৩০,০০০-র বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়।
3. পুরনো ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট বজায় রাখুন:
এটি আপনার দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলার প্রমাণ দেয়।
4. একসাথে একাধিক ঋণের জন্য আবেদন করবেন না:
এতে বারবার ‘হার্ড ইনকোয়ারি’ তৈরি হয় এবং স্কোর কমে যায়।
5. নিয়মিত আপনার ক্রেডিট রিপোর্ট চেক করুন:
রিপোর্টে কোনো ভুল থাকলে দ্রুত সংশোধন করুন। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে স্কোর কমে যেতে পারে।
আপনার জন্য একটি কুইজ!

প্রশ্ন: নিজের ক্রেডিট স্কোর চেক করলে কী হয়?
A. আপনার ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়
B. স্কোর বেড়ে যায়
C. স্কোরে কোনো প্রভাব পড়ে না
D. স্কোর কমে যায়
সঠিক উত্তর:  C. স্কোরে কোনো প্রভাব পড়ে না

আধুনিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় শুধু অর্থ উপার্জনের দক্ষতা থাকলেই হবে না, ক্রেডিট ব্যবস্থার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। ভুল ধারণার কারণে যদি আপনি বারবার ঋণ প্রত্যাখ্যাত হন, তাহলে সেটা আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আজই নিজের স্কোর জেনে নিন, ভুলগুলো শোধরান এবং সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যান।