অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) ভারতে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাষ্ট্রদূত আব্দুলনাসির আলশালির সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন । এই বৈঠকে ইউএই এবং অসমের মধ্যে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিক্ষা, উদ্ভাবন, লজিস্টিকস ও সংযোগ, এবং টেকসই পর্যটনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত আলশালি (Himanta) অসমে একটি সরকারি সফরে এসেছেন, যার মূল উদ্দেশ্য হলো দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং বিনিয়োগ সহযোগিতার সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা।
রাষ্ট্রদূত আলশালি বলেন, “অসম (Himanta) উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউএই-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে এই সম্ভাবনাগুলি কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা আমার জন্য আনন্দদায়ক ছিল। ইউএই এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের সঙ্গে তার অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ এবং এর চলমান উন্নয়নকে সমর্থন করতে আগ্রহী।”
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) বলেন, “আজ লোকসেবা ভবনে ইউএই-এর রাষ্ট্রদূত মহামান্য আব্দুলনাসির আলশালিকে আতিথ্য দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। ইউএই অসমে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সংযোগ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধানে আগ্রহী। আমরা উত্তর-পূর্ব ভারত কীভাবে আমাদের দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করতে পারে তা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি।”
জোগীঘোঁপা মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস পার্ক: একটি গেম-চেঞ্জার
বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় ছিল ভারতের জোগীঘোঁপা মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস পার্কের উন্নয়ন। এই পার্কটি সড়ক, রেল এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহনকে একীভূত করে অসমকে আঞ্চলিক এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছে।
এই প্রকল্পটি অসমের মাধ্যমে ইউএই, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সংযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জোগীঘোঁপা পার্কের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এটি লজিস্টিকস, পর্যটন এবং শক্তি খাতে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জোগীঘোঁপা মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস পার্কটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত কার্গো ট্র্যাকিং এবং স্মার্ট ওয়্যারহাউসিং সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছে। এছাড়া, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং স্বয়ংক্রিয় গাইডেড যানবাহন (এজিভি) ব্যবহারের মাধ্যমে এটি টেকসই পরিবহন সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই পার্কটি বছরে ১৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি পণ্য পরিচালনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা অসমকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করবে।
ইউএই-ভারত সিইপিএ: অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি
বৈঠকে ইউএই-ভারত ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সিইপিএ) গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অসমের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেক্সটাইল, সুস্থতা, এবং হস্তশিল্প ও হ্যান্ডলুমের মতো অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
সিইপিএ (Himanta) কার্যকর হওয়ার পর থেকে, ইউএই এবং ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির পেছনে অ-তেল বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ রয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
উভয় পক্ষ ২০৩০ সালের মধ্যে অ-তেল বাণিজ্যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্য অর্জনের প্রতি আশাবাদী। সিইপিএ কাউন্সিল (ইউআইসিসি) গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) এবং স্টার্টআপগুলির জন্য অর্থনৈতিক সংযোগ আরও জোরদার করা হচ্ছে। এই কাউন্সিল অসমের কৃষি, হস্তশিল্প এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে।
অসমের কৌশলগত গুরুত্ব
অসমের (Himanta) ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে। মায়ানমার, চিন, ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ৫,৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকায় অসম ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সেতু হিসেবে কাজ করে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, “অসম আর প্রান্তিক নয়, এটি এখন ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রে। আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ইন্ডিয়া-মায়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক হাইওয়ে এবং কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের মতো অবকাঠামো উদ্যোগ অসমকে এশিয়ান হাইওয়ে ১ (এএইচ১)-এর সঙ্গে সংযুক্ত করছে, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জোগীঘোঁপা পার্কের মতো প্রকল্পগুলি এই সংযোগকে আরও শক্তিশালী করবে।
অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে সহযোগিতা
ইউএই এবং অসমের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, যা অসমের অর্থনীতির একটি মূল স্তম্ভ। রাষ্ট্রদূত আলশালি (Himanta) অসমের হস্তশিল্প ও হ্যান্ডলুম শিল্পের প্রশংসা করেন এবং এই খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও, শিক্ষা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা অসমের তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। টেকসই পর্যটনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা অসমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে।
গভীর রাতে ঢাকার দুর্গা মন্দিরে হামলা, মন্দির ভাঙার চরম সময়সীমা
সমাজ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া (Himanta)
এই বৈঠক অসমের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার উপর নতুন আলোকপাত করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং শিল্প নেতারা ইউএই-এর সঙ্গে এই অংশীদারিত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক্স প্ল্যাটফর্মে অনেকে এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অসমের জোগীঘোঁপা পার্ক এবং ইউএই-এর বিনিয়োগ অসমকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করবে।”
ইউএই-এর সঙ্গে অসমের (Himanta) এই নতুন অংশীদারিত্ব রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি মাইলফলক হতে চলেছে। জোগীঘোঁপা মাল্টিমোডাল লজিস্টিকস পার্ক এবং সিইপিএ-এর মতো উদ্যোগ অসমকে ভারতের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মার নেতৃত্বে অসম এখন বৈশ্বিক বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এই সহযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির জন্যও একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।