ঢাকার খিলখেত এলাকার একটি দুর্গা মন্দিরে (Durga Temple in Dhaka) গভীর রাতে হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সুমন সুধা নামে একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী এই অভিযোগ করেছেন যে, রাতের অন্ধকারে একদল উগ্রবাদী মানুষ মন্দিরে হঠাৎ এসে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তাঁরা জানান, হামলাকারীরা মঙ্গলবার (জুন ২৪, ২০২৫) বেলা ১২টার ভেতরে মন্দির ভেঙে ফেলার আলটিমেটাম দিয়ে গেছে। এই ঘটনাটি স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
খিলখেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আশিকুর রহমান এই ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি ঘটনা জানতে পেরেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা থানায় আছেন, এবং আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” তিনি আরও জানান যে, মন্দির ভাঙার আলটিমেটাম দেওয়ার বিষয়ে কিছু মৌলবাদী মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়ে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। “এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই অনেক কিছু বলে। তবে আমরা পুরো বিষয়টি দেখছি, যাতে করে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়,” তিনি বলেন।
এই ঘটনার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই মন্দির চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কিছুটা সাহস দেওয়ার পাশাপাশি উগ্রবাদীদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখারও একটি প্রয়াস। তবে এই পুলিশী ব্যবস্থা সত্ত্বেও স্থানীয়রা ভয় পাচ্ছেন, কারণ তাঁরা মনে করছেন যে, উগ্রবাদীদের হুমকি মূর্ত রূপ নিতে পারে।
এই ঘটনাটি বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর চলমান হামলা ও হুমকির একটি অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর ও ধর্মীয় স্থানগুলির উপর হুমকির ঘটনা বারবার ঘটেছে। বিশেষ করে দুর্গা পূজার সময় এই ধরনের ঘটনা বেড়ে যায়, যা স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায়।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারা জানান যে, এই ধরনের হামলা ও হুমকি তাঁদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংস্কৃতির উপর প্রত্যক্ষ আঘাত হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা দাবি করছেন যে, সরকার ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকে এই হামলাকে দেশের সাম্প্রদায়িক সামঞ্জস্যের উপর একটি কালো দাগ হিসেবে দেখছেন, যা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার principio-কে ক্ষুণ্ণ করছে। অন্যদিকে, কিছু মানুষ এই ধরনের ঘটনাকে দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত করছেন, যেখানে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদিও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাঁরা আশা করছেন যে, সরকার এই ধরনের হামলা ও হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে, যাতে তাঁদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
News coming in from #Dhaka of #Bangladesh.
Right now, thousands of Islamists have gathered in front of a Durga Temple in the #Khilkhet area.
Islamists are demanding to remove the Durga Temple from the area because seeing Durga Murti is haram for them.
The administration… pic.twitter.com/FAh1FSonZG
— Hindu Voice (@HinduVoice_in) June 23, 2025
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র স্থানীয় স্তরে নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক সাম্প্রদায়িক সামঞ্জস্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা ও শান্তির প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধরনের ঘটনা একটি বড় বাধা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। সরকার ও সামাজিক নেতৃত্বদানকারীদের জন্য এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা একটি জরুরি প্রয়োজন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
সুতরাং, এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি মন্দির হামলার ঘটনা নয়, বরং এটি দেশের সাম্প্রদায়িক সামঞ্জস্য, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের জন্য এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা একটি জরুরি দায়িত্ব হিসেবে দাঁড়িয়েছে।