ভারত, চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা ব্যবহৃত দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটি বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়, যেখানে পুনর্ব্যবহৃত সোনার অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে অল্প। এই নির্ভরতা সোনার দামের (Gold Prices) ওঠানামার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলারে সোনার মূল্য নির্ধারণ হওয়ায়, ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামা ভারতীয় বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় অর্থনীতির প্রভাব:
সোনার দাম কেবল বৈশ্বিক চাহিদা-জোগানের ওপর নির্ভর করে না, বরং স্থানীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি, বন্ড ইয়িল্ড এবং ডলারের গতিপ্রকৃতি—সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবে স্থির হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রুপির বিপরীতে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ভারতে সোনার দাম উর্ধ্বমুখী।
কর কাঠামো ও আমদানি শুল্কের প্রভাব:
ভারতে সোনার খুচরা মূল্য বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং জটিল কর কাঠামো। বর্তমানে সোনার ওপর ১২.৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং ৩ শতাংশ জিএসটি আরোপিত, যা সোনার খরচকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই কর কাঠামো একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়ায়, অন্যদিকে সাধারণ গ্রাহকের জন্য এটি সোনায় বিনিয়োগ কিছুটা ব্যয়বহুল করে তোলে।
নিম্নে ভারতের ১০টি প্রধান শহরের বর্তমান সোনার দাম তুলে ধরা হল:
- দিল্লি:
২২ ক্যারেট – ৯,১৭০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ১০,০০২ টাকা প্রতি গ্রাম - চেন্নাই:
২২ ক্যারেট – ৯,১৫৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৮৭ টাকা প্রতি গ্রাম - বেঙ্গালুরু:
২২ ক্যারেট – ৯,১৫৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৮৭ টাকা প্রতি গ্রাম - মুম্বই:
২২ ক্যারেট – ৯,১৫৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৮৭ টাকা প্রতি গ্রাম - পুনে:
২২ ক্যারেট – ৯,১৫৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৮৭ টাকা প্রতি গ্রাম - কলকাতা:
২২ ক্যারেট – ৯,১৫৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৮৭ টাকা প্রতি গ্রাম - আহমেদাবাদ:
২২ ক্যারেট – ৯,১৬০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৯২ টাকা প্রতি গ্রাম - হায়দরাবাদ:
২২ ক্যারেট – ৯,১৫৫ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৮৭ টাকা প্রতি গ্রাম - ইন্দোর:
২২ ক্যারেট – ৯,১৬০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ৯,৯৯২ টাকা প্রতি গ্রাম - লখনউ:
২২ ক্যারেট – ৯,১৭০ টাকা প্রতি গ্রাম
২৪ ক্যারেট – ১০,০০২ টাকা প্রতি গ্রাম
বিনিয়োগ হিসেবে সোনার গুরুত্ব:
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে সোনা দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। স্টক মার্কেট বা রিয়েল এস্টেটের মতো ক্ষেত্রগুলো যখন অস্থির, তখন বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকেন কারণ এটি তার মূল্যমানে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী মন্দাভাব, মুদ্রাস্ফীতি এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে সোনার চাহিদা বাড়ছে। এই প্রবণতা ভারতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “সোনার দাম বাড়লেও এটি এখনও একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কার্যকর। দীর্ঘমেয়াদে সোনা বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থায়ী মুনাফার সম্ভাবনা রাখে, বিশেষ করে যারা অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে নিরাপত্তা খোঁজেন।”
ভবিষ্যৎ প্রবণতা:
বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বিবেচনায় রেখে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সোনার দাম আগামী মাসগুলোতেও ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। ভারতের বিয়ের মৌসুম, ধর্মীয় উৎসব, এবং বিশ্ববাজারে চাহিদা বৃদ্ধি—এই সবকিছু মিলিয়ে সোনার দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের মতো দেশে, যেখানে সোনা কেবল গয়না বা অলঙ্কার নয় বরং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে সোনার দাম বাড়া মানে শুধুই বাজারদর বৃদ্ধি নয়, বরং তা সাধারণ মানুষের জীবনের ওপরও প্রভাব ফেলে। মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেও, সোনা তার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার কারণে আজও বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক পরিবেশ যাই হোক না কেন, সোনার আবেদন কমবে না—এটাই সময়ের প্রমাণ।